আগামীকাল ৫ মে ঢাকা অবরোধ করবে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। ১৩ দফা দাবি
আদায়ে ঘোষিত এ কর্মসূচি সফলে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রচারণা ও গণসংযোগসহ যাবতীয়
প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সংগঠনটি। রোববার ফজরের পর থেকেই ঢাকার ৬টি
প্রবেশপথে হেফাজতের নেতাকর্মীরা অবস্থান গ্রহণ করবেন। এরই মধ্যে সারাদেশ
থেকে ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন হেফাজতের অনেক কর্মী। শুক্রবার বিকালেই
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
তিনি হেফাজতের লালবাগ মাদরাসা কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে অবরোধ কর্মসূচির
বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন।
এদিকে হেফাজতে ইসলামের এ অবরোধ কর্মসূচি বানচালে সরকারি মহল থেকে নানা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে। ঢাকায় আসতে বাধা দেয়া হচ্ছে হেফাজত কর্মীদের। বাস ভাড়া দিতে নিষেধ করা হচ্ছে পরিবহন মালিকদের। অবরোধের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো অনুমতিও দেয়া হয়নি। বরং এ কর্মসূচি প্রত্যাহারের জন্য দফায় দফায় আহ্বান জানানো হচ্ছে ১৪ দলীয় জোটের নেতা ও মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে সন্ধ্যায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে হেফাজতের কর্মসূচি স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়। তবে কোনো ষড়যন্ত্রই ৫ মে হেফাজতের ঢাকা অবরোধ ও মহাজাগরণ ঠেকাতে পারবে না বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন সংগঠনের নেতারা।
সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন, আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ইসলাম ধর্ম অবমাননাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আইন পাস, নারী নীতি ও শিক্ষানীতির ইসলামবিরোধী ধারাগুলো বিলুপ্তসহ ১৩ দফা দাবিতে ৬ এপ্রিলের লংমার্চ সমাবেশ থেকে ঢাকা অবরোধের এ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় হেফাজতে ইসলাম। কর্মসূচি সফলের জন্য এরই মধ্যে সারাদেশে সভা-সমাবেশ ও প্রস্তুতিমূলক কর্মকাণ্ড শেষ করেছে সংগঠনটি। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তৌহিদি জনতা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন বলে গতকাল রাজধানীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতারা জানান। সব বাধা উপেক্ষা করে ১৩ দফা দাবিতে কাল ঢাকার ৬টি প্রবেশপথ— যাত্রাবাড়ী থেকে কাচপুর সেতু, যাত্রাবাড়ী থেকে ডেমরা সেতু, পোস্তগোলা বুড়িগঙ্গা সেতু, পুরানঢাকার বাবুবাজার সেতু, আবদুল্লাহপুর-টঙ্গী ব্রিজ ও আমিনবাজারের বলিয়ারপুর এলাকায় হেফাজত নেতাকর্মীরা অবস্থান নেবেন বলেও জানানো হয়। অবস্থানকালে মাইকে বক্তব্যের পাশাপাশি হামদ নাত পরিবেশন করা হবে। তবে এ অবস্থানের সময়সীমা ওইদিনের পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে বলে নেতারা জানান।
এদিকে কাল ঢাকা অবরোধ সফলের আহ্বানে গতকাল রাজধানীসহ সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে হেফাজতে ইসলাম। বাদজুমা এসব বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
অপরদিকে হেফাজতের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করার জন্য গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে আহ্বান জানিয়েছেন তাত্ক্ষনিকভাবে তার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন হেফাজতের আমির আল্লামা আহমদ শফীসহ অন্য নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর এসব বক্তব্য স্ববিরোধী, বিভ্রান্তিমূলক ও কূটকৌশলের আশ্রয় বলে মন্তব্য করেছেন তারা। ৫ তারিখের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি বহাল থাকবে বলেও আল্লামা শফী ঘোষণা দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে আজ সকাল ১১টায় লালবাগে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আল্লামা আহমদ শফী তার সংগঠনের চূড়ান্ত অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন বলে জানা গেছে।
রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলন : গতকাল রাজধানীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক নূর হোসাইন কাসেমী বলেছেন, কোনো ষড়যন্ত্রই কাল হেফাজতের মহাজাগরণ ঠেকাতে পারবে না। ঢাকা অবরোধে কোনো বাধা দিলে বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
সকাল সাড়ে ১১টায় লালবাগ মাদরাসা কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্যে নুর হোসাইন কাসেমী আরও বলেন, ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি সফলে সর্বাত্মক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার তৌহিদি জনতা ঢাকা অভিমুখে রওনা দিয়েছেন এবং অচিরেই আরও লাখ লাখ মানুষ ঢাকা অভিমুখে আসার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী। কিন্তু ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি বানচাল করার জন্য সরকার ও তাদের দলীয় ক্যাডার ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং প্রশাসনের মাধ্যমে নানা ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। সরকার এরই মধ্যে দেশব্যাপী পরিবহন সংস্থাগুলোকে তাদের গাড়ি না চালানোর নির্দেশ দিয়েছে। সারাদেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সরকার দলীয় ক্যাডাররা নানাভাবে হুমকি ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। কিন্তু আমরা সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই, ১৩ দফা মেনে নিন। ভয়ভীতির মাধ্যমে আল্লাহ ও রাসুল প্রেমিকদের দমানো যাবে না। যে কোনো মূল্যে ৫ মে’র ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি সফল করা হবেই ইনশাআল্লাহ। সারাদেশ থেকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের তসবিহ, জায়নামাজ, মিসওয়াক ও শুকনো খাবার নিয়ে ৫ মে ফজরের সময় ঢাকার সবক’টি প্রবেশপথে শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবরোধ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ময়দানে নেমে আসার উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।
৬ এপ্রিলের লংমার্চে বাধা দেয়ার অভিজ্ঞতাকে স্মরণ করিয়ে আল্লামা কাসেমী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা মুসলমান। আপনারা অন্যায়ভাবে ঈমানী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কারও ওপর হাত উঠাবেন না। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি সফলের ব্যাপারে সার্বিক সহায়তা করুন। তিনি বলেন, ইসলাম শ্রমিকদের যে অধিকার দিয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে এদেশে মালিক-শ্রমিকের বৈষম্যের নিরসন হবে। ৫ মে’র অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহারের দাবি না করে সর্বস্তরের শ্রমিক সংগঠন রাজপথে নেমে আসুন। পরিবহন ও নৌযান মালিক শ্রমিকদের ৫ মের আগে সারাদেশ থেকে হেফাজতকর্মীদের ঢাকায় আনার এবং ৫ মে সব ধরনের যানবাহন বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ১৩ দফা বাস্তবায়ন হলে আপনাদের অধিকার সংরক্ষিত হবে। এ জন্য সেদিন ঢাকা অবরোধে মালিক শ্রমিক সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হবে। আর অবরোধ সফলে সর্বস্তরের নারীদের ৫ মে রোজা পালন ও দোয়া করার জন্য আহ্বান জানান।
হেফাজতে ইসলাম সরকারের কাছে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণসহ ১৩ দফা দাবি পেশ করেছে। সরকার ১৩ দফা মানা তো দূরের কথা বরং তা মানা হবে না বলে ঘোষণা দিচ্ছে। সরকারের এহেন মনোভাবে এদেশের কোটি কোটি মুসলমান চরমভাবে ক্ষুব্ধ। আমরা আবারও জানিয়ে দিতে চাই, ক্ষমতায় থাকতে হলে কিংবা যেতে চাইলে ১৩ দফা মেনেই তা সম্ভব হবে, তাছাড়া নয়। আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলন করে যাচ্ছি। ৫ মে’র আগে আমাদের দাবি মানুন, তা না হলে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের মহাজাগরণ ঠেকানো সরকারের জন্য কোনোক্রমেই সম্ভব হবে না। আর তার পুরো দায়ভার সরকারকেই বহন করতে হবে। হেফাজতে ইসলামকে পাশ কাটিয়ে ভিন্ন কিছু করার অপচেষ্টা করা হলে এর জন্য চরম মাশুল দিতে হবে।
তিনি দেশ ও ঈমান রক্ষার এই আন্দোলনে ঢাকা মহানগরের সর্বস্তরের মানুষকে ৫ মে সারাদেশ থেকে আগত অবরোধকারীদের ৬ এপ্রিলের মতো অভ্যর্থনা ও আপ্যায়নের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এবং পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত সর্বস্তরের জনগণকে সেদিন ফজরের আগেই ঢাকার সবকয়টি প্রবেশপথ বন্ধ করে অবস্থানের আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রোববার ভোর ৬টা থেকে ঢাকায় প্রবেশের পথগুলোতে হেফাজতের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেবেন। তবে অবস্থান কর্মসূচি কতক্ষণ পর্যন্ত চলবে তা জানানো হয়নি। যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর সেতু, যাত্রাবাড়ী থেকে ডেমরা সেতু, পোস্তগোলা বুড়িগঙ্গা সেতু, পুরান ঢাকার বাবুবাজার সেতু, আবদুল্লাহপুর-টঙ্গী ব্রিজ ও আমিনবাজারের বলিয়ারপুর ঢাকায় প্রবেশমুখের এ ছয়টি জায়গায় অবরোধ কর্মসূচি চলবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, ঢাকা মহানগর উপদেষ্টা মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা আবদুর রব ইউসূফী, ঢাকা মহানগরের সদস্য সচিব জুনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব মুফতি তৈয়্যব প্রমুখ।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ : কাল ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি সফলের আহ্বানে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করে হেফাজতে ইসলাম। কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, লালবাগ, যাত্রাবাড়ীসহ সংশ্লিষ্ট সব জোনের উদ্যোগে এসব বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি ও পত্রিকার ছাপাখানা খুলে দেয়ারও দাবি জানানো হয়।
কামরাঙ্গীরচর মাদরাসা মাঠে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে খেলাফত আন্দোলনের আমির ও হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা শাহ আহমদুল্লাহ আশরাফ ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয় এবং কাউকে ক্ষমতা থেকে উত্খাত ও কাউকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়। এ অবরোধ কর্মসূচি আল্লাহ-রাসূল (সা.) ও ইসলামের অবমাননার প্রতিবাদে নাস্তিক-ব্লগারদের বিরুদ্ধে ঈমানদারদের আন্দোলন। ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীনদের ভূমিকাই প্রমাণ করবে তারা ঈমানদারদের পক্ষে না নাস্তিকদের পক্ষে? সরকার প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করে জাতির সঙ্গে ধোঁকাবাজি করছে।
হেফাজতে ইসলাম কামরাঙ্গীরচর থানা আমির মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ জাফরুল্লাহ খান, মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবিব, মুফতি মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্মাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, ঢাকা মহানগরী যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা আবদুর রব ইউসূফী, যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা মুজিবুুর রহমান হামিদী, যুগ্ম সদস্য সচিব অধ্যাপক আবদুল করিম, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা ফখরুল ইসলাম, মাওলানা আবু জাফর কাসেমী, মাওলানা সাইফুল ইসলাম সুনামগঞ্জী, মুফতি জাফরুল্লাহ মাহবুব, মুফতি জাফর আহমদ, মুফতি জসিম উদ্দীন ও মাওলানা আবদুর রহমান বেতাকী প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন মাওলানা সুলতান মহিউদ্দীন।
বাদ জুমা খিলগাঁও জোনের উদ্যোগে বাসাবো খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজতের নায়েবে আমির মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস। বক্তব্য রাখেন সংগঠনের নেতা মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, মাওলানা আবদুর রব ইউসূফী, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী, মাওলানা আজিজুল ইসলাম ইসলামাবাদী প্রমুখ।
হেফাজতে ইসলাম লালবাগ জোন আয়োজিত সমাবেশে নেতারা বলেন, হেফাজতের ১৩ দফা দাবি দিয়ে সরকারি মদতে একটি কুচক্রী মহল বিভ্রান্তি ছড়িয়ে নারী সমাজকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি সফল করে তাদের দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে। তারা আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করে বলেন, অবিলম্বে নবীপ্রেমিক মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি না দিলে সারাদেশে গণবিস্ফোরণ ঘটবে। লালবাগ জোনের আহ্বায়ক মাওলানা জসিম উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাদ জুমা চকবাজার শাহী মসজিদের পূর্ব গেটে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী, মুফতি তৈয়্যব হোসাইন, মাওলানা শেখ লোকমান হোসাইন, আলহাজ জামাল নাসের চৌধুরী, মাওলানা আজিজুর রহমান, মাওলানা মিনহাজুদ্দীন, মাওলানা সাইফুল ইসলাম প্রমুখ। বক্তব্য শেষে বিশাল একটি মিছিল বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
বাদ জুমা মিরপুরের ১ নম্বর গোল চত্বর থেকে মাওলানা মোস্তফা আজাদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বৃহত্তর মিরপুর হেফাজতে ইসলাম। মিছিলপূর্ব সমাবেশে নেতারা বলেন, সারাদেশে ইসলামী জনতা আজ ১৩ দফার দাবি ফুঁসে উঠেছে। যদি ৫ মের আগে এই দাবি মানা না হয় তাহলে ১৩ দফার আন্দোলন এক দফায় রূপ নিতে পারে।
মাওলানা গাজী ইয়াকুবের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন মাওলানা কারি আবদুল খালেক, মাওলানা লোকমান মাজহারী, মাওলানা আবদুল হাই ফারুকী, মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ মাসুম, মাওলানা নাছির উদ্দীন ভূঁইয়া, মাওলানা রবিউল্লাহ, মাওলানা হামেদ গাহেরী প্রমুখ। সমাবেশ শেষে প্রায় ১০ হাজার লোকের একটি বিশাল মিছিল ১নং গোল চত্বর থেকে ১০নং গোল চত্বরে গিয়ে দোয়ার মাধ্যমে শেষ হয়।
এছাড়া বাদ জুমা মোহাম্মদপুর জোনে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মাওলানা আবদুর রউফ ইউসূফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মুফতি মাহফুজুল হক, মাওলানা আবদুর রব ইউসূফী, মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, মাওলানা আহমদ আলী, মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানী, ঢাকা মহানগরী নেতা মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, প্রিন্সিপাল মাওলানা ফারুক আহমদ, প্রিন্সিপাল মাওলানা তালহা, প্রিন্সিপাল মাওলানা যুবায়ের প্রমুখ। পরে বিশাল একটি মিছিল বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
খেলাফতে ইসলামী : ৫ মে হেফাজতে ইসলামের ডাকে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন খেলাফতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী ও মহাসচিব মাওলানা ফজলুর রহমান। গতকাল এক বিবৃতিতে তারা বলেন, বর্তমান সরকার মুসলমানদের ইমান নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে শুরু করেছে। নাস্তিক-মুরতাদ বেষ্টিত সরকার হেফাজতের ১৩ দফা দাবি নিয়ে মিথ্যাচার করে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বাংলাদেশকে ইসলামশূন্য করতে চায়।
এদিকে হেফাজতে ইসলামের এ অবরোধ কর্মসূচি বানচালে সরকারি মহল থেকে নানা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে। ঢাকায় আসতে বাধা দেয়া হচ্ছে হেফাজত কর্মীদের। বাস ভাড়া দিতে নিষেধ করা হচ্ছে পরিবহন মালিকদের। অবরোধের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো অনুমতিও দেয়া হয়নি। বরং এ কর্মসূচি প্রত্যাহারের জন্য দফায় দফায় আহ্বান জানানো হচ্ছে ১৪ দলীয় জোটের নেতা ও মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে সন্ধ্যায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে হেফাজতের কর্মসূচি স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়। তবে কোনো ষড়যন্ত্রই ৫ মে হেফাজতের ঢাকা অবরোধ ও মহাজাগরণ ঠেকাতে পারবে না বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন সংগঠনের নেতারা।
সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন, আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ইসলাম ধর্ম অবমাননাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আইন পাস, নারী নীতি ও শিক্ষানীতির ইসলামবিরোধী ধারাগুলো বিলুপ্তসহ ১৩ দফা দাবিতে ৬ এপ্রিলের লংমার্চ সমাবেশ থেকে ঢাকা অবরোধের এ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় হেফাজতে ইসলাম। কর্মসূচি সফলের জন্য এরই মধ্যে সারাদেশে সভা-সমাবেশ ও প্রস্তুতিমূলক কর্মকাণ্ড শেষ করেছে সংগঠনটি। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তৌহিদি জনতা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন বলে গতকাল রাজধানীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতারা জানান। সব বাধা উপেক্ষা করে ১৩ দফা দাবিতে কাল ঢাকার ৬টি প্রবেশপথ— যাত্রাবাড়ী থেকে কাচপুর সেতু, যাত্রাবাড়ী থেকে ডেমরা সেতু, পোস্তগোলা বুড়িগঙ্গা সেতু, পুরানঢাকার বাবুবাজার সেতু, আবদুল্লাহপুর-টঙ্গী ব্রিজ ও আমিনবাজারের বলিয়ারপুর এলাকায় হেফাজত নেতাকর্মীরা অবস্থান নেবেন বলেও জানানো হয়। অবস্থানকালে মাইকে বক্তব্যের পাশাপাশি হামদ নাত পরিবেশন করা হবে। তবে এ অবস্থানের সময়সীমা ওইদিনের পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে বলে নেতারা জানান।
এদিকে কাল ঢাকা অবরোধ সফলের আহ্বানে গতকাল রাজধানীসহ সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে হেফাজতে ইসলাম। বাদজুমা এসব বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
অপরদিকে হেফাজতের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করার জন্য গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে আহ্বান জানিয়েছেন তাত্ক্ষনিকভাবে তার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন হেফাজতের আমির আল্লামা আহমদ শফীসহ অন্য নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর এসব বক্তব্য স্ববিরোধী, বিভ্রান্তিমূলক ও কূটকৌশলের আশ্রয় বলে মন্তব্য করেছেন তারা। ৫ তারিখের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি বহাল থাকবে বলেও আল্লামা শফী ঘোষণা দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে আজ সকাল ১১টায় লালবাগে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আল্লামা আহমদ শফী তার সংগঠনের চূড়ান্ত অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন বলে জানা গেছে।
রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলন : গতকাল রাজধানীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক নূর হোসাইন কাসেমী বলেছেন, কোনো ষড়যন্ত্রই কাল হেফাজতের মহাজাগরণ ঠেকাতে পারবে না। ঢাকা অবরোধে কোনো বাধা দিলে বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
সকাল সাড়ে ১১টায় লালবাগ মাদরাসা কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্যে নুর হোসাইন কাসেমী আরও বলেন, ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি সফলে সর্বাত্মক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার তৌহিদি জনতা ঢাকা অভিমুখে রওনা দিয়েছেন এবং অচিরেই আরও লাখ লাখ মানুষ ঢাকা অভিমুখে আসার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী। কিন্তু ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি বানচাল করার জন্য সরকার ও তাদের দলীয় ক্যাডার ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং প্রশাসনের মাধ্যমে নানা ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। সরকার এরই মধ্যে দেশব্যাপী পরিবহন সংস্থাগুলোকে তাদের গাড়ি না চালানোর নির্দেশ দিয়েছে। সারাদেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সরকার দলীয় ক্যাডাররা নানাভাবে হুমকি ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। কিন্তু আমরা সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই, ১৩ দফা মেনে নিন। ভয়ভীতির মাধ্যমে আল্লাহ ও রাসুল প্রেমিকদের দমানো যাবে না। যে কোনো মূল্যে ৫ মে’র ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি সফল করা হবেই ইনশাআল্লাহ। সারাদেশ থেকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের তসবিহ, জায়নামাজ, মিসওয়াক ও শুকনো খাবার নিয়ে ৫ মে ফজরের সময় ঢাকার সবক’টি প্রবেশপথে শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবরোধ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ময়দানে নেমে আসার উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।
৬ এপ্রিলের লংমার্চে বাধা দেয়ার অভিজ্ঞতাকে স্মরণ করিয়ে আল্লামা কাসেমী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা মুসলমান। আপনারা অন্যায়ভাবে ঈমানী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কারও ওপর হাত উঠাবেন না। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি সফলের ব্যাপারে সার্বিক সহায়তা করুন। তিনি বলেন, ইসলাম শ্রমিকদের যে অধিকার দিয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে এদেশে মালিক-শ্রমিকের বৈষম্যের নিরসন হবে। ৫ মে’র অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহারের দাবি না করে সর্বস্তরের শ্রমিক সংগঠন রাজপথে নেমে আসুন। পরিবহন ও নৌযান মালিক শ্রমিকদের ৫ মের আগে সারাদেশ থেকে হেফাজতকর্মীদের ঢাকায় আনার এবং ৫ মে সব ধরনের যানবাহন বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ১৩ দফা বাস্তবায়ন হলে আপনাদের অধিকার সংরক্ষিত হবে। এ জন্য সেদিন ঢাকা অবরোধে মালিক শ্রমিক সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হবে। আর অবরোধ সফলে সর্বস্তরের নারীদের ৫ মে রোজা পালন ও দোয়া করার জন্য আহ্বান জানান।
হেফাজতে ইসলাম সরকারের কাছে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণসহ ১৩ দফা দাবি পেশ করেছে। সরকার ১৩ দফা মানা তো দূরের কথা বরং তা মানা হবে না বলে ঘোষণা দিচ্ছে। সরকারের এহেন মনোভাবে এদেশের কোটি কোটি মুসলমান চরমভাবে ক্ষুব্ধ। আমরা আবারও জানিয়ে দিতে চাই, ক্ষমতায় থাকতে হলে কিংবা যেতে চাইলে ১৩ দফা মেনেই তা সম্ভব হবে, তাছাড়া নয়। আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলন করে যাচ্ছি। ৫ মে’র আগে আমাদের দাবি মানুন, তা না হলে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের মহাজাগরণ ঠেকানো সরকারের জন্য কোনোক্রমেই সম্ভব হবে না। আর তার পুরো দায়ভার সরকারকেই বহন করতে হবে। হেফাজতে ইসলামকে পাশ কাটিয়ে ভিন্ন কিছু করার অপচেষ্টা করা হলে এর জন্য চরম মাশুল দিতে হবে।
তিনি দেশ ও ঈমান রক্ষার এই আন্দোলনে ঢাকা মহানগরের সর্বস্তরের মানুষকে ৫ মে সারাদেশ থেকে আগত অবরোধকারীদের ৬ এপ্রিলের মতো অভ্যর্থনা ও আপ্যায়নের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এবং পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত সর্বস্তরের জনগণকে সেদিন ফজরের আগেই ঢাকার সবকয়টি প্রবেশপথ বন্ধ করে অবস্থানের আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রোববার ভোর ৬টা থেকে ঢাকায় প্রবেশের পথগুলোতে হেফাজতের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেবেন। তবে অবস্থান কর্মসূচি কতক্ষণ পর্যন্ত চলবে তা জানানো হয়নি। যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর সেতু, যাত্রাবাড়ী থেকে ডেমরা সেতু, পোস্তগোলা বুড়িগঙ্গা সেতু, পুরান ঢাকার বাবুবাজার সেতু, আবদুল্লাহপুর-টঙ্গী ব্রিজ ও আমিনবাজারের বলিয়ারপুর ঢাকায় প্রবেশমুখের এ ছয়টি জায়গায় অবরোধ কর্মসূচি চলবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, ঢাকা মহানগর উপদেষ্টা মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা আবদুর রব ইউসূফী, ঢাকা মহানগরের সদস্য সচিব জুনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব মুফতি তৈয়্যব প্রমুখ।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ : কাল ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি সফলের আহ্বানে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করে হেফাজতে ইসলাম। কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, লালবাগ, যাত্রাবাড়ীসহ সংশ্লিষ্ট সব জোনের উদ্যোগে এসব বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি ও পত্রিকার ছাপাখানা খুলে দেয়ারও দাবি জানানো হয়।
কামরাঙ্গীরচর মাদরাসা মাঠে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে খেলাফত আন্দোলনের আমির ও হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা শাহ আহমদুল্লাহ আশরাফ ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয় এবং কাউকে ক্ষমতা থেকে উত্খাত ও কাউকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়। এ অবরোধ কর্মসূচি আল্লাহ-রাসূল (সা.) ও ইসলামের অবমাননার প্রতিবাদে নাস্তিক-ব্লগারদের বিরুদ্ধে ঈমানদারদের আন্দোলন। ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীনদের ভূমিকাই প্রমাণ করবে তারা ঈমানদারদের পক্ষে না নাস্তিকদের পক্ষে? সরকার প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করে জাতির সঙ্গে ধোঁকাবাজি করছে।
হেফাজতে ইসলাম কামরাঙ্গীরচর থানা আমির মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ জাফরুল্লাহ খান, মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবিব, মুফতি মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্মাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, ঢাকা মহানগরী যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা আবদুর রব ইউসূফী, যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা মুজিবুুর রহমান হামিদী, যুগ্ম সদস্য সচিব অধ্যাপক আবদুল করিম, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা ফখরুল ইসলাম, মাওলানা আবু জাফর কাসেমী, মাওলানা সাইফুল ইসলাম সুনামগঞ্জী, মুফতি জাফরুল্লাহ মাহবুব, মুফতি জাফর আহমদ, মুফতি জসিম উদ্দীন ও মাওলানা আবদুর রহমান বেতাকী প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন মাওলানা সুলতান মহিউদ্দীন।
বাদ জুমা খিলগাঁও জোনের উদ্যোগে বাসাবো খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজতের নায়েবে আমির মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস। বক্তব্য রাখেন সংগঠনের নেতা মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, মাওলানা আবদুর রব ইউসূফী, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী, মাওলানা আজিজুল ইসলাম ইসলামাবাদী প্রমুখ।
হেফাজতে ইসলাম লালবাগ জোন আয়োজিত সমাবেশে নেতারা বলেন, হেফাজতের ১৩ দফা দাবি দিয়ে সরকারি মদতে একটি কুচক্রী মহল বিভ্রান্তি ছড়িয়ে নারী সমাজকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি সফল করে তাদের দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে। তারা আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করে বলেন, অবিলম্বে নবীপ্রেমিক মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি না দিলে সারাদেশে গণবিস্ফোরণ ঘটবে। লালবাগ জোনের আহ্বায়ক মাওলানা জসিম উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাদ জুমা চকবাজার শাহী মসজিদের পূর্ব গেটে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী, মুফতি তৈয়্যব হোসাইন, মাওলানা শেখ লোকমান হোসাইন, আলহাজ জামাল নাসের চৌধুরী, মাওলানা আজিজুর রহমান, মাওলানা মিনহাজুদ্দীন, মাওলানা সাইফুল ইসলাম প্রমুখ। বক্তব্য শেষে বিশাল একটি মিছিল বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
বাদ জুমা মিরপুরের ১ নম্বর গোল চত্বর থেকে মাওলানা মোস্তফা আজাদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বৃহত্তর মিরপুর হেফাজতে ইসলাম। মিছিলপূর্ব সমাবেশে নেতারা বলেন, সারাদেশে ইসলামী জনতা আজ ১৩ দফার দাবি ফুঁসে উঠেছে। যদি ৫ মের আগে এই দাবি মানা না হয় তাহলে ১৩ দফার আন্দোলন এক দফায় রূপ নিতে পারে।
মাওলানা গাজী ইয়াকুবের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন মাওলানা কারি আবদুল খালেক, মাওলানা লোকমান মাজহারী, মাওলানা আবদুল হাই ফারুকী, মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ মাসুম, মাওলানা নাছির উদ্দীন ভূঁইয়া, মাওলানা রবিউল্লাহ, মাওলানা হামেদ গাহেরী প্রমুখ। সমাবেশ শেষে প্রায় ১০ হাজার লোকের একটি বিশাল মিছিল ১নং গোল চত্বর থেকে ১০নং গোল চত্বরে গিয়ে দোয়ার মাধ্যমে শেষ হয়।
এছাড়া বাদ জুমা মোহাম্মদপুর জোনে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মাওলানা আবদুর রউফ ইউসূফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মুফতি মাহফুজুল হক, মাওলানা আবদুর রব ইউসূফী, মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, মাওলানা আহমদ আলী, মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানী, ঢাকা মহানগরী নেতা মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, প্রিন্সিপাল মাওলানা ফারুক আহমদ, প্রিন্সিপাল মাওলানা তালহা, প্রিন্সিপাল মাওলানা যুবায়ের প্রমুখ। পরে বিশাল একটি মিছিল বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
খেলাফতে ইসলামী : ৫ মে হেফাজতে ইসলামের ডাকে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন খেলাফতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী ও মহাসচিব মাওলানা ফজলুর রহমান। গতকাল এক বিবৃতিতে তারা বলেন, বর্তমান সরকার মুসলমানদের ইমান নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে শুরু করেছে। নাস্তিক-মুরতাদ বেষ্টিত সরকার হেফাজতের ১৩ দফা দাবি নিয়ে মিথ্যাচার করে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বাংলাদেশকে ইসলামশূন্য করতে চায়।