একটি সুন্দর জীবন বৃত্তান্ত তৈরীর উপায়

আপনার জীবনবৃত্তান্ত (CV) হচ্ছে একজন সম্ভাব্য চাকুরিদাতার কাছে একজন চাকুরিপ্রার্থী হিসাবে উপস্থাপন করার প্রাথমিক মাধ্যম। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় চাকুরিপ্রার্থীরা তাদের জীবনবৃত্তান্ত সুন্দর এবং সঠিকভাবে তৈরী করার ব্যপারে গুরুত্ব প্রদান করে না। ফলশ্রুতিতে অনেক যোগ্য প্রার্থীই Interview তে ডাক পায় না এবং যোগ্যতা প্রমানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।

আপনার জীবনবৃত্তান্ত (CV) তৈরীর আগে যে সকল বাস্তবতার দিকে নজর রাখবেন
¤   একজন চাকুরিদাতা গড়ে একটি জীবনবৃত্তান্ত-এর উপর ৩০ সেকেন্ডের বেশী সময় দেয় না। সুতরাং এটি হতে হবে সংক্ষিপ্ত। তথ্যগুলোর উপস্থাপন হতে হবে সুস্পষ্ট। অপ্রয়োজনীয় বা অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিহার করতে হবে।
¤   একজন অনভিজ্ঞ/ সদ্য পাস করা চাকুরিপ্রার্থীর জীবনবৃত্তান্ত এক থেকে দুই পাতার বেশী হওয়া কোনভাবেই উচিৎ নয়।
¤   আপনার জীবনবৃত্তান্ত হচ্ছে আপনার নিজেকে বিপণন করার মাধ্যম। সুতরাং এটি হতে হবে আকর্ষণীয়। তবে চটকদার কোন কিছু যেমন রঙিন কাগজ বা রঙিন কালি ব্যবহার করবেন না। কোন কিছু Highlight করতে হলে সেটিকে Bold , italic বা underline করতে পারেন।
¤   মনে রাখবেন, আপনার জীবনবৃত্তান্তের মধ্যে যদি কোন বানান ভুল বা ভাষাগত/ Grammatical ভুল থাকে তবে সম্ভাব্য চাকুরিদাতার আপনার সম্বন্ধে নেতিবাচক ধারণা হবে। এটি প্রকাশ পাবে যে আপনি কোন কাজই নির্ভুল ভাবে করতে সক্ষম নন। সুতরাং একটি CV তৈরীর পর সেটি নিজে ভাল করে পড়ুন এবং শুদ্ধ ইংরেজী জানেন এমন ব্যক্তিকে দেখিয়ে নিন।
¤   যখন আপনি কোন নির্দিষ্ট চাকুরি বিজ্ঞপ্তির-এর বিপরীতে আবেদন করার জন্য জীবনবৃত্তান্ত পাঠাবেন, তখন চেষ্টা করুন আপনার জীবনবৃত্তান্ত সেই চাকুরির চাহিদা অনুযায়ী তৈরী করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন চাকুরি বিজ্ঞপ্তি ভাল করে পড়া এবং প্রতিষ্ঠানটি সম্বন্ধে কিছু গবেষণা করা। উদাহরণ স্বরুপ আপনি যদি জানেন যে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের যে কোন স্থানে নিয়োগ দিতে পারে, তাহলে আপনি আপনার জীবনবৃত্তান্তে উল্লেখ করতে পারেন আপনি বাংলাদেশের কোন কোন স্থানে পূর্বে অবস্থান করেছেন। অথবা কোন নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এমন কোন লোক খুঁজছে যার একজন সংগঠকের ভূমিকা পালন করতে হবে, সেই ক্ষেত্রে আপনি যদি আপনার ছাত্রজীবনের কোন সাংগঠনকারীর ভূমিকা উল্লেখ করেন তবে আপনার জীবনবৃত্তান্ত নিয়োগকারীর কাছে আলাদা মূল্য পাবে।
¤   এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি আপনার জীবনবৃত্তান্ত তে সঠিক তথ্য দিবেন। এমন কোন তথ্য দিবেন না যা আপনার সাক্ষাৎকারে ভুল প্রমানিত হতে পারে।

একটি জীবনবৃত্তান্তে (CV) যে তথ্যগুলো আপনি সুবিন্যস্ত ভাবে উপস্থাপন করবেন সেগুলো হচ্ছে
¤   শিরোনাম (Title)
¤   সার সংক্ষেপ (Career Summary) : অভিজ্ঞতা সম্পন্নদের জন্য বেশী প্রয়োজন।
¤   ক্যারিয়ার উদ্দেশ্য  (Career objective): সদ্য পাশ করা চাকুরি প্রার্থীদের জন্য বেশী প্রয়োজন।
¤   চাকুরির অভিজ্ঞতা (Experience)
¤   শিক্ষাগত যোগ্যতা (Education)
¤   অতিরিক্ত তথ্য (Additional Information)
¤   ব্যক্তিগত তথ্য (Personal Information)
¤   রেফারেন্স (Reference)    

শিরোনাম (Title)
জীবনবৃত্তান্তের শুরুতেই থাকবে আপনার পুরো নাম। এটা বোল্ড (bold) হবে এবং একটু বড় ফন্টে লিখতে হবে (ডাক নাম পরিহার করুন)। তার পর থাকবে আপনার ঠিকানা (বর্তমান ঠিকানা যেখানে আপনাকে চিঠি দিলে আপনি পাবেন), ফোন নম্বর ও ই-মেইল অ্যাড্রেস। এই অংশটুকু পৃষ্ঠার উপরে মধ্যখানে থাকবে, যাতে তা প্রথমেই চোখে পরে।

Career  সার সংক্ষেপ (Summary)

যে সকল ব্যক্তিদের ৪-৫ বছরের বেশী চাকরীর অভিজ্ঞতা আছে তাদের জন্য এটি বেশী প্রযোজ্য। এই অংশে আপনি সর্বোচ্চ ৬-৭ লাইনে উল্লেখ করুন আপনার পূর্ব চাকরীর অভিজ্ঞতার কর্মক্ষেত্রগুলো। আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতার সাফল্যগুলো (Achievement) সংক্ষেপে তুলে ধরুন (যদি থাকে)।

Career Objective    

এটি বেশী প্রযোজ্য সদ্য পাশ করা চাকুরি প্রার্থী ব অল্প অভিজ্ঞ (১-২ বছর) চাকুরি প্রার্থীদের জন্য। এই অংশে আপনি আপনার চাকুরিক্ষেত্রে বর্তমান লক্ষ্য (Immediate goal) উল্লেখ করুন এবং আপনার যোগ্যতা কিভাবে বিজ্ঞপ্তিত ( Advetised) চাকুরি বা যে প্রতিষ্ঠানে পাঠাচ্ছেন, তার প্রয়োজন মেটাতে পারে তার প্রেক্ষিতে উপস্থাপন করুন।চাকুরির জন্য উপযুক্ত ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করুন। চাকুরি বিজ্ঞপ্তি বা কোম্পানির প্রয়োজনের সাথে খাপ খাইয়ে Career Objective লেখা জরুরী। আপনি কোম্পানিকে কি দিতে পারবেন তার ওপর গুরুত্বারোপ করুন, কোম্পানির কাছ থেকে আপনি কি আশা করছেন তার ওপর নয়।  

Experience (কর্ম অভিজ্ঞতা)

অভিজ্ঞ পেশাজীবিদের জন্য এই অংশটি শিক্ষাগত যোগ্যতার আগেই আসা উচিৎ। সদ্য পাশ করা বা অল্প অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে আগে শিক্ষাগত যোগ্যতা (Education) এবং তার পরে experience আসা উচিৎ।

যে সকল তথ্য আপনার প্রতিটি পূর্ব অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে উল্লেখ করবেন সেগুলো হচ্ছে,
Organization name (প্রতিষ্ঠানের নাম)
Designation (পদবী)
Time period-     From & To     (সময়কাল)
Job responsibility (দায়িত্ব)
Special achievement     (উল্লেখযোগ্য সাফল্য)

আপনি যদি একই প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদে কাজ করে থাকেন, তাহলে আলাদা আলাদা ভাবে তা উল্লেখ করুন।  
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আপনি প্রথমেই উল্লেখ করবেন আপনার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা most recent experience), তার পরে এক এক করে Chronological Order -এ একটির পর একটি অভিজ্ঞতা উল্লেখ করবেন যা শেষ হবে আপনার সর্বপ্রথম অভিজ্ঞতা দিয়ে।
আপনার খুব কম গুরুত্বপূর্ণ বা কম সময়ের অভিজ্ঞতা উল্লেখ না করাই ভাল। তবে লক্ষ্য রাখবেন যে আপনার List of experience এর মধ্যে যাতে খুব বেশী Time gap না থাকে।

Education & Training (শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণ)
আগেই বলা হয়েছে যে এই অংশটি সদ্য পাশ করা বা অল্প অভিজ্ঞদের জন্য Experience    অংশের আগেই আসা উচিৎ। Education অংশে আপনি আপনার ডিগ্রিগুলোর নাম উল্লেখ করবেন এবং নিম্নে বর্ণিত তথ্য প্রদান করবেন।
ডিগ্রির নাম (যেমন: SSC, HSC, BCOM)
কোর্স সময়কাল (কবে থেকে কবে)
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বোর্ডের নাম।
পরীক্ষার বছর এবং প্রয়োজনে ফলাফল প্রকাশের সময়।
ফলাফল/Result এবং যদি উল্লেখযোগ্য সাফল্য (যেমন: মেধাতালিকায় স্থান) থাকে তবে তার উল্লেখ করতে হবে।
Experience-এর মতো এক্ষেত্রেও আপনি আপনার সবচেয়ে সাম্প্রতিক ডিগ্রির উল্লেখ আগে করবেন এবং তার পর পর্যায়ক্রমিক ভাবে বাকিগুলো উল্লেখ করবেন।
লক্ষ্য রাখবেন আপনার কোন ডিগ্রির চূড়ান্ত ফলাফল এখনও প্রকাশ না হয়ে থাকলে সেই ডিগ্রির উল্লেখ করার সময় ব্র্যাকেটে "Appeared" উল্লেখ করবেন। কোন কোর্সে অধ্যায়নরত থাকলে Ongoing উল্লেখ করুন। কোন ডিগ্রির ক্ষেত্রে আপনার Result যদি খুব খারাপ হয়ে থাকে তবে কোন Result-ই উল্লেখ করার দরকার নেই। মনে রাখবেন একটি ডিগ্রির ফলাফল উল্লেখ করা ও অন্যটি উল্লেখ না করা দৃষ্টিকটু।
আপনি যদি কোন বিশেষ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে থাকেন এবং যদি তা আপনার কাজের যোগ্যতার সহায়ক বলে মনে করেন তবে তা উল্লেখ করবেন। সেক্ষেত্রেও প্রশিক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, Topics, প্রতিষ্ঠানের সময় (Duration) তারিখ উল্লেখ করবেন।
প্রশিক্ষণের তালিকা আপনি Education অংশের নীচে দিতে পারেন।

অতিরিক্ত তথ্য / Additional Information
যে সকল তথ্য উপরে উল্লেখিত অংশগুলোর মধ্যে পড়ে না কিন্তু চাকরির সাথে সম্পর্কিত তা এ বিভাগে বর্ণনা করুন।  
¤   পেশাগত অর্জন / Professional Achievement    
¤   পদক/ সম্মাননা/ Award
¤   ভাষাগত দক্ষতা / Language Literacy    
¤   কম্পিউটারে দক্ষতা / Computer Skills.
¤   লাইসেন্স,সরকারি পরিচয়পত্র, প্রকাশিত লেখা ও স্বত্বাধিকার
¤   স্বেচ্ছাসেবী কর্মকান্ড ইত্যাদি

ব্যক্তিগত তথ্য / Personal Information
এই অংশে পিতামাতা, বর্তমান/স্থায়ী ঠিকানা, ধর্ম, যে সকল দেশ আপনি ভ্রমণ করেছেন, শখ ইত্যাদি এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে।

রেফারেন্স (Reference)    

খেয়াল রাখবেন Reference অংশে আপনি আপনার নিকট আত্মীয়দের নাম উল্লেখ করবেন না। আপনাকে আপনার ছাত্র জীবনে বা কর্মজীবনে কাছ থেকে দেখেছে এমন ব্যক্তিকেই আপনি Reference হিসাবে উল্লেখ করবেন। অবশ্যই যাদেরকে Reference দিবেন তাদের ফোন নাম্বার, ঠিকানা এবং ই-মেইল (যদি থাকে) উল্লেখ করবেন। সাধারণত Reference হিসাবে সর্বোচ্চ ২-৩ জনের নাম উল্লেখ করাই শ্রেয়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ব্যাপারের দিকে খেয়াল রাখতে হবে তা হচ্ছে আপনি যাদেরকে Reference হিসাবে উল্লেখ করেছেন সে সকল ব্যক্তিকে আপনার আগে থেকে জানাতে হবে যে আপনি তাদের Reference হিসাবে আপনার জীবনবৃত্তান্ত (CV)-তে উল্লেখ করেছেন।