প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, হেফাজতের ১৩ দফা দাবির অনেকগুলো
বাস্তবায়ন করা আছে। বাকি দাবিগুলোর মধ্যে যেগুলো যৌক্তিক, সেগুলো নিয়ে
আলোচনা হবে।
আজ শুক্রবার গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের ১৩ দফা দাবি নিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি হেফাজতের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে আলোচনা করেন।
সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম আছে
হেফাজতের প্রথম দাবি, সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং ‘কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিল করা’ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম ধর্ম সংবিধান থেকে বাদ যায়নি। বিসমিল্লাহ বলেই সংবিধান শুরু হয়েছে। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম লেখা রয়েছে।
ধর্মের অবমাননার শাস্তির বিধান আছে
আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুত্সা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে, হেফাজতের এই দাবির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধর্মের অবমাননার বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান আমাদের স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্টে আছে। ২০০৯ সালে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন করা হয়েছে। সেখানেও বিধান আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ধর্ম ও আমাদের প্রিয় মহানবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে কুত্সা রটনার জন্য এখন পর্যন্ত চারজন ব্লগারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সবার শাস্তি হবে।
নিরীহ আলেমদের গ্রেপ্তারের তালিকা দিন
শান্তিপ্রিয় নিরপরাধ আলেম ওলামাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, শাস্তিও হয়নি বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইসলাম পবিত্র ধর্ম। কেউ যদি ধর্মকে ব্যবহার করে জঙ্গিবাদী কাজে লিপ্ত হয়, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি হেফাজতের উদ্দেশে বলেন, ‘নিরীহ আলেম ওলামা গ্রেপ্তারের তালিকা থাকলে জানাবেন, ব্যবস্থা নেব।’
ধর্ম পালনে কোথাও বাধা দেয়নি সরকার
বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধা বিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করতে হবে—হেফাজতের এই দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদসহ দেশের কোথাও ধর্ম পালনে কাউকে বাধা দেয়নি সরকার।
মোমবাতিতে অনীহা কেন?
হেফাজতের ইসলামের একটি দাবি হলো, ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে। এই দাবির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, মোমবাতির প্রতি তাঁদের এত অনীহা কেন? বিদ্যুত্ চলে গেলে সবাইকে মোমবাতি জ্বালাতে হয়। মোমবাতি ও মশাল ধর্মবিরোধী কোনো বিষয় নয়। পবিত্র মক্কা শরিফেও তাঁবুতে তাঁবুতে আলোর জন্য মশাল জ্বালানো হতো। ব্যভিচার আমরা পছন্দ করি না। ব্যভিচারের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
সৌদি আরবে অনেক ভাস্কর্য আছে
হেফাজতের আরও একটি দাবি হচ্ছে, মসজিদের নগর ঢাকাকে মূর্তির নগরে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সৌদি আরবে অনেক ভাস্কর্য আছে। এ ব্যাপারে তারা অনেক পারদর্শী। এ ছাড়া সৌদি আরব, আরব আমিরাত ও আরব রাষ্ট্রগুলোতে ভাস্কর্যের উত্কর্ষ সাধিত হয়েছে। মূর্তি বানানো হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজার জন্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে কোনো অশ্লীল ভাস্কর্য তৈরি করা হবে না।
ধর্মের পাশাপাশি পার্থিব শিক্ষা নিতে হবে
ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে—এই দাবির ব্যাপারে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সরকারের সময়ে প্রথম শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে আমরা ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছি। যখন এটা করেছি, তখন তো কেউ এর বিরোধিতা করেন নাই।’ তিনি বলেন, ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি পার্থিব শিক্ষাও নিতে হবে।
নারীর অবমাননা হয়, এমন নীতি নয়
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নারী নীতিতে সংশোধন করে একটি লাইন যুক্ত করা হয়েছে। আমরা নারীর অবমাননা হয়, এমন কোনো নীতি প্রণয়ন করব না।’ তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ইসলাম ধর্ম প্রথম কে গ্রহণ করেছে? হজরত খাদিজা (র.)। তিনি একজন নারী। বিবি আয়শা নবীজির সঙ্গে থেকে যুদ্ধ করেছেন। হজরত খাদিজার ব্যবসা পুরো আবর বিশ্বে সুনাম কুড়িয়েছিল। ইসলামের জন্য যুদ্ধ করতে গিয়ে যিনি প্রথম শহীদ হন, তিনি একজন নারী, তাঁর নাম সুমাইয়া।
ইমাম, খতিবকে হুমকি দিলে ব্যবস্থা নেব
সারা দেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ এবং মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখানোসহ তাঁদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে—এ দাবির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের যদি কোনো ধরনের হুমকি দেওয়া হয়, তাহলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আলেম ওলামাদের নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক প্রচার বন্ধ করা হবে
হেফাজতের অন্যতম একটি দাবি হলো—রেডিও, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় দাড়ি-টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি কালচার নিয়ে হাসি-ঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় খল ও নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে যেন ধর্মের বা ধর্মীয় লোকদের ব্যঙ্গাত্মকভাবে উপস্থাপন না করা হয়, সেজন্য সজাগ দৃষ্টি রাখা হবে। রেডিও-টেলিভিশনে আলেম-ওলামাদের নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কোনো কিছু করা হলে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং তা বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ধর্মের নামে জঙ্গিবাদী কাজ যেন না হয়
পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিষ্টান মিশনারিদের ধর্মান্তকরণসহ সব অপতত্পরতা বন্ধ করতে হবে—হেফাজতের এই দাবির প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পার্বত্য এলাকায় জোর করে ধর্মান্তরিত করা বন্ধে আইন অনুযায়ী কাজ করা হবে। পবিত্র ধর্মের নামে জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড যেন কেউ করতে না পারে, এ জন্য আলেম-ওলামাসহ সবার প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
হেফাজতে ইসলামের ১৩ দাবি
১। সংবিধানে ‘আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিল করতে হবে।
২। আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুত্সা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে।
৩। কথিত শাহবাগী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক-মুরতাদ এবং প্রিয় নবী (সা.)-এর শানে জঘন্য কুত্সা রটনাকারী কুলাঙ্গার ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪। ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
৫। ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৬। সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতত্পরতা বন্ধ করতে হবে।
৭। মসজিদের নগর ঢাকাকে মূর্তির নগরে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করতে হবে।
৮। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধাবিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধা দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
৯। রেডিও, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় দাড়ি-টুপি ও ইসলামী কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসি-ঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় খল ও নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করতে হবে।
১০। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিষ্টান মিশনারিদের ধর্মান্তকরণসহ সব অপতত্পরতা বন্ধ করতে হবে।
১১। রাসুলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদ্রাসাছাত্র এবং তৌহিদি জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং গণহত্যা বন্ধ করতে হবে।
১২। সারাদেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ এবং মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দানসহ তাঁদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।
১৩। অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত সব আলেম-ওলামা, মাদ্রাসাছাত্র ও তৌহিদি জনতাকে মুক্তিদান, দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণসহ দুষ্কৃতকারীদেরকে বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
আজ শুক্রবার গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের ১৩ দফা দাবি নিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি হেফাজতের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে আলোচনা করেন।
সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম আছে
হেফাজতের প্রথম দাবি, সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং ‘কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিল করা’ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম ধর্ম সংবিধান থেকে বাদ যায়নি। বিসমিল্লাহ বলেই সংবিধান শুরু হয়েছে। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম লেখা রয়েছে।
ধর্মের অবমাননার শাস্তির বিধান আছে
আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুত্সা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে, হেফাজতের এই দাবির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধর্মের অবমাননার বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান আমাদের স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্টে আছে। ২০০৯ সালে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন করা হয়েছে। সেখানেও বিধান আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ধর্ম ও আমাদের প্রিয় মহানবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে কুত্সা রটনার জন্য এখন পর্যন্ত চারজন ব্লগারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সবার শাস্তি হবে।
নিরীহ আলেমদের গ্রেপ্তারের তালিকা দিন
শান্তিপ্রিয় নিরপরাধ আলেম ওলামাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, শাস্তিও হয়নি বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইসলাম পবিত্র ধর্ম। কেউ যদি ধর্মকে ব্যবহার করে জঙ্গিবাদী কাজে লিপ্ত হয়, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি হেফাজতের উদ্দেশে বলেন, ‘নিরীহ আলেম ওলামা গ্রেপ্তারের তালিকা থাকলে জানাবেন, ব্যবস্থা নেব।’
ধর্ম পালনে কোথাও বাধা দেয়নি সরকার
বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধা বিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করতে হবে—হেফাজতের এই দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদসহ দেশের কোথাও ধর্ম পালনে কাউকে বাধা দেয়নি সরকার।
মোমবাতিতে অনীহা কেন?
হেফাজতের ইসলামের একটি দাবি হলো, ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে। এই দাবির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, মোমবাতির প্রতি তাঁদের এত অনীহা কেন? বিদ্যুত্ চলে গেলে সবাইকে মোমবাতি জ্বালাতে হয়। মোমবাতি ও মশাল ধর্মবিরোধী কোনো বিষয় নয়। পবিত্র মক্কা শরিফেও তাঁবুতে তাঁবুতে আলোর জন্য মশাল জ্বালানো হতো। ব্যভিচার আমরা পছন্দ করি না। ব্যভিচারের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
সৌদি আরবে অনেক ভাস্কর্য আছে
হেফাজতের আরও একটি দাবি হচ্ছে, মসজিদের নগর ঢাকাকে মূর্তির নগরে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সৌদি আরবে অনেক ভাস্কর্য আছে। এ ব্যাপারে তারা অনেক পারদর্শী। এ ছাড়া সৌদি আরব, আরব আমিরাত ও আরব রাষ্ট্রগুলোতে ভাস্কর্যের উত্কর্ষ সাধিত হয়েছে। মূর্তি বানানো হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজার জন্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে কোনো অশ্লীল ভাস্কর্য তৈরি করা হবে না।
ধর্মের পাশাপাশি পার্থিব শিক্ষা নিতে হবে
ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে—এই দাবির ব্যাপারে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সরকারের সময়ে প্রথম শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে আমরা ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছি। যখন এটা করেছি, তখন তো কেউ এর বিরোধিতা করেন নাই।’ তিনি বলেন, ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি পার্থিব শিক্ষাও নিতে হবে।
নারীর অবমাননা হয়, এমন নীতি নয়
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নারী নীতিতে সংশোধন করে একটি লাইন যুক্ত করা হয়েছে। আমরা নারীর অবমাননা হয়, এমন কোনো নীতি প্রণয়ন করব না।’ তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ইসলাম ধর্ম প্রথম কে গ্রহণ করেছে? হজরত খাদিজা (র.)। তিনি একজন নারী। বিবি আয়শা নবীজির সঙ্গে থেকে যুদ্ধ করেছেন। হজরত খাদিজার ব্যবসা পুরো আবর বিশ্বে সুনাম কুড়িয়েছিল। ইসলামের জন্য যুদ্ধ করতে গিয়ে যিনি প্রথম শহীদ হন, তিনি একজন নারী, তাঁর নাম সুমাইয়া।
ইমাম, খতিবকে হুমকি দিলে ব্যবস্থা নেব
সারা দেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ এবং মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখানোসহ তাঁদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে—এ দাবির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের যদি কোনো ধরনের হুমকি দেওয়া হয়, তাহলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আলেম ওলামাদের নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক প্রচার বন্ধ করা হবে
হেফাজতের অন্যতম একটি দাবি হলো—রেডিও, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় দাড়ি-টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি কালচার নিয়ে হাসি-ঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় খল ও নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে যেন ধর্মের বা ধর্মীয় লোকদের ব্যঙ্গাত্মকভাবে উপস্থাপন না করা হয়, সেজন্য সজাগ দৃষ্টি রাখা হবে। রেডিও-টেলিভিশনে আলেম-ওলামাদের নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কোনো কিছু করা হলে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং তা বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ধর্মের নামে জঙ্গিবাদী কাজ যেন না হয়
পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিষ্টান মিশনারিদের ধর্মান্তকরণসহ সব অপতত্পরতা বন্ধ করতে হবে—হেফাজতের এই দাবির প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পার্বত্য এলাকায় জোর করে ধর্মান্তরিত করা বন্ধে আইন অনুযায়ী কাজ করা হবে। পবিত্র ধর্মের নামে জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড যেন কেউ করতে না পারে, এ জন্য আলেম-ওলামাসহ সবার প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
হেফাজতে ইসলামের ১৩ দাবি
১। সংবিধানে ‘আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিল করতে হবে।
২। আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুত্সা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে।
৩। কথিত শাহবাগী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক-মুরতাদ এবং প্রিয় নবী (সা.)-এর শানে জঘন্য কুত্সা রটনাকারী কুলাঙ্গার ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪। ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
৫। ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৬। সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতত্পরতা বন্ধ করতে হবে।
৭। মসজিদের নগর ঢাকাকে মূর্তির নগরে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করতে হবে।
৮। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধাবিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধা দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
৯। রেডিও, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় দাড়ি-টুপি ও ইসলামী কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসি-ঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় খল ও নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করতে হবে।
১০। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিষ্টান মিশনারিদের ধর্মান্তকরণসহ সব অপতত্পরতা বন্ধ করতে হবে।
১১। রাসুলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদ্রাসাছাত্র এবং তৌহিদি জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং গণহত্যা বন্ধ করতে হবে।
১২। সারাদেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ এবং মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দানসহ তাঁদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।
১৩। অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত সব আলেম-ওলামা, মাদ্রাসাছাত্র ও তৌহিদি জনতাকে মুক্তিদান, দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণসহ দুষ্কৃতকারীদেরকে বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি সম্পর্কে আজ শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে স্ববিরোধী ও পাশ কাটিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করার
চেষ্টা বলে মন্তব্য করেছেন সংগঠনের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী। আজ রাতে
দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে কোনো রকম বিভ্রান্তির শিকার না হয়ে পূর্ণ উদ্যম ও প্রস্তুতি নিয়ে আগামী রোববার ‘ঢাকা অবরোধ’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে বলা হয়েছে। তবে, সাভার দুর্ঘটনায় লাশবাহী গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, উদ্ধার তত্পরতায় নিয়োজিত সব ধরনের যান, দেশি-বিদেশি পরিদর্শকদের গাড়িসহ এ জাতীয় যানবাহন অবরোধের আওতা মুক্ত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।
দীর্ঘ বিবৃতিতে হেফাজতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সব বক্তব্যের জবাব দেন আহমদ শফী। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে কাল শনিবার সকাল ১১টার দিকে লালবাগে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে।
বিবৃতিতে আহমদ শফী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে হেফাজতের ১৩ দফা দাবি সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য কোনো মত ও দিক-নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। বরং বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর বক্তব্যে স্ববিরোধী ব্যাখা ও পাশ কাটিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টাই ছিল বিশেষভাবে লক্ষণীয়। সে কারণেই আমরা আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি যথারীতি বহাল রাখার প্রত্যয় ঘোষণা করছি।’
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে স্ব-বিরোধিতার বহু নজির ফুটে উঠেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার ‘সংবিধানবিরোধী’ ও ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ বলার পরও প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দফার সঙ্গে একমত পোষণ করে প্রচলিত আইনে কী কী ধারা-উপধারা রয়েছে তাও উল্লেখ করেছেন। আবার সংবিধানে ‘আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপনের বিষয়টি পাশ কাটিয়ে ‘রাষ্ট্র ধর্ম’ ও ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ উল্লেখ থাকার কথা বলে ওই মৌলিক বাক্যটি পুণঃস্থাপন করা নিয়ে কোনো কথা বলা হয়নি। ইসলামের অবমাননা ও কটূক্তির বিষয়ে প্রচলিত ‘ধর্ম অবমাননা আইন’ ‘স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট’ এবং ‘তথ্য প্রযুক্তি আইনের’ ধারায় বর্ণিত শাস্তির কথা তুলে ধরলেও সর্বোচ্চ শাস্তির আইন প্রণয়ন বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। গ্রেপ্তার করা চারজন ব্লগারের বিরুদ্ধেও বিদ্যমান আইনে কঠোর কোনো ধারায় মামলা করা হয়নি।
বলা হয়, আলেম উলামা, ইমাম, খতিব ও মাদরাসার ছাত্রদের হয়রানি, হুমকির বিষয়টির সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী অজ্ঞতা প্রকাশ করলেও বাস্তবতা হচ্ছে, এ পর্যন্ত আন্দোলনরত প্রায় দশ জন আলেমকে হত্যা করা হয়েছে। বহু আলেম খতিবকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, বহু মাদ্রাসা বাধ্যতামূলক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর ভাস্কর্য ও মূর্তির মধ্যে ব্যবধান তৈরি করে প্রধানমন্ত্রী যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তার সঙ্গে ইসলামের অবস্থান ও নীতির কোনো সম্পর্ক নেই। এক্ষেত্রে কোনো কোনো আরব দেশের উদাহরণ টেনে ইসলাম ভাস্কর্যকে উত্কর্ষ দান করেছে বলে যে কথা বলা হয়েছে, তা ইসলামের শিল্পনীতি সম্পর্কে একটি ভুল ব্যাখ্যা।
নারীনীতি, নারী-অধিকার, অশ্লীলতা, ব্যভিচার ইত্যাদি বিষয়ে ইসলামী অনুশাসনের প্রশংসা করে আবার নারীনীতির ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ধারার বিষয়গুলো পাশ কাটিয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী।
বিবৃতিতে কোনো রকম বিভ্রান্তির শিকার না হয়ে পূর্ণ উদ্যম ও প্রস্তুতি নিয়ে আগামী রোববার ‘ঢাকা অবরোধ’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে বলা হয়েছে। তবে, সাভার দুর্ঘটনায় লাশবাহী গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, উদ্ধার তত্পরতায় নিয়োজিত সব ধরনের যান, দেশি-বিদেশি পরিদর্শকদের গাড়িসহ এ জাতীয় যানবাহন অবরোধের আওতা মুক্ত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।
দীর্ঘ বিবৃতিতে হেফাজতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সব বক্তব্যের জবাব দেন আহমদ শফী। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে কাল শনিবার সকাল ১১টার দিকে লালবাগে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে।
বিবৃতিতে আহমদ শফী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে হেফাজতের ১৩ দফা দাবি সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য কোনো মত ও দিক-নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। বরং বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর বক্তব্যে স্ববিরোধী ব্যাখা ও পাশ কাটিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টাই ছিল বিশেষভাবে লক্ষণীয়। সে কারণেই আমরা আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি যথারীতি বহাল রাখার প্রত্যয় ঘোষণা করছি।’
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে স্ব-বিরোধিতার বহু নজির ফুটে উঠেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার ‘সংবিধানবিরোধী’ ও ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ বলার পরও প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দফার সঙ্গে একমত পোষণ করে প্রচলিত আইনে কী কী ধারা-উপধারা রয়েছে তাও উল্লেখ করেছেন। আবার সংবিধানে ‘আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপনের বিষয়টি পাশ কাটিয়ে ‘রাষ্ট্র ধর্ম’ ও ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ উল্লেখ থাকার কথা বলে ওই মৌলিক বাক্যটি পুণঃস্থাপন করা নিয়ে কোনো কথা বলা হয়নি। ইসলামের অবমাননা ও কটূক্তির বিষয়ে প্রচলিত ‘ধর্ম অবমাননা আইন’ ‘স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট’ এবং ‘তথ্য প্রযুক্তি আইনের’ ধারায় বর্ণিত শাস্তির কথা তুলে ধরলেও সর্বোচ্চ শাস্তির আইন প্রণয়ন বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। গ্রেপ্তার করা চারজন ব্লগারের বিরুদ্ধেও বিদ্যমান আইনে কঠোর কোনো ধারায় মামলা করা হয়নি।
বলা হয়, আলেম উলামা, ইমাম, খতিব ও মাদরাসার ছাত্রদের হয়রানি, হুমকির বিষয়টির সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী অজ্ঞতা প্রকাশ করলেও বাস্তবতা হচ্ছে, এ পর্যন্ত আন্দোলনরত প্রায় দশ জন আলেমকে হত্যা করা হয়েছে। বহু আলেম খতিবকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, বহু মাদ্রাসা বাধ্যতামূলক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর ভাস্কর্য ও মূর্তির মধ্যে ব্যবধান তৈরি করে প্রধানমন্ত্রী যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তার সঙ্গে ইসলামের অবস্থান ও নীতির কোনো সম্পর্ক নেই। এক্ষেত্রে কোনো কোনো আরব দেশের উদাহরণ টেনে ইসলাম ভাস্কর্যকে উত্কর্ষ দান করেছে বলে যে কথা বলা হয়েছে, তা ইসলামের শিল্পনীতি সম্পর্কে একটি ভুল ব্যাখ্যা।
নারীনীতি, নারী-অধিকার, অশ্লীলতা, ব্যভিচার ইত্যাদি বিষয়ে ইসলামী অনুশাসনের প্রশংসা করে আবার নারীনীতির ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ধারার বিষয়গুলো পাশ কাটিয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী।