মকছুদ এর ব্লগ
Daily Manab Zamin | সাভার দুর্ঘটনা ‘তেমন ভয়াবহ নয়’
Daily Manab Zamin | সাভার দুর্ঘটনা ‘তেমন ভয়াবহ নয়’
মানবজমিন ডেস্ক: সাভারের ভবন ধসের
দুর্ঘটনাকে তেমন ভয়াবহ বলে মনে করেন না অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
সাভারের ধ্বংসস্তূপে নিহতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই
এপি’র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এ ধরনের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল
মাল আবদুল মুহিত। সেই সঙ্গে সাভার দুর্ঘটনার কারণে গার্মেন্ট শিল্পে যে
কোন ধরনের নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়টিও তিনি নাকচ করে দিয়েছেন। বর্তমানে
ভারতের রাজধানী দিল্লি সফরে থাকা অর্থমন্ত্রী এপিকে দেয়া এক সংক্ষিপ্ত
সাক্ষাৎকারে বলেছেন সাভার দুর্ঘটনা বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পের কোন ক্ষতি
করবে না। তিনি বলেন- বর্তমানের সঙ্কটকে আমি তেমন গুরুতর মনে করি না। এটা
একটি দুর্ঘটনা মাত্র। মুহিত বলেন, এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটতে পারে সে
জন্য আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি। এব্যাপারে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা
হয়েছে। আমি মনে করি, এ উদ্যোগ সবাইকে আশ্বস্ত করবে। বিদেশী ক্রেতারা
বাংলাদেশ থেকে বেরিয়ে যেতে পারে ভেবে তিনি চিন্তিত কিনা জানতে চাইলে এপিকে
তিনি বলেন- এ ধরনের দুর্ঘটনা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এ ধরনের দুর্ঘটনা
সবখানেই ঘটে। গত ২৪শে এপ্রিল সাভারে ভবন ধসের দুর্ঘটনাকে বিশ্বে গার্মেন্ট
কারখানার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। বহু আগে
১৯১১ সালে নিউ ইয়র্কের ট্রায়াঙ্গাল শার্টওয়েস্ট ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকাণ্ডের
ঘটনাতে ১৪৬ কর্মী নিহত হয়েছিলেন। আর সামপ্রতিক সময়ে পাকিস্তানে একটি
কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ২৬০ ব্যক্তি নিহত হয়েছিলেন এবং গত বছরই বাংলাদেশে
আরেকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১১২ জন নিহত হয়েছিলেন।
হেফাজতের দাবি ও
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, হেফাজতের ১৩ দফা দাবির অনেকগুলো
বাস্তবায়ন করা আছে। বাকি দাবিগুলোর মধ্যে যেগুলো যৌক্তিক, সেগুলো নিয়ে
আলোচনা হবে।
আজ শুক্রবার গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের ১৩ দফা দাবি নিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি হেফাজতের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে আলোচনা করেন।
সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম আছে
হেফাজতের প্রথম দাবি, সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং ‘কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিল করা’ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম ধর্ম সংবিধান থেকে বাদ যায়নি। বিসমিল্লাহ বলেই সংবিধান শুরু হয়েছে। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম লেখা রয়েছে।
ধর্মের অবমাননার শাস্তির বিধান আছে
আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুত্সা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে, হেফাজতের এই দাবির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধর্মের অবমাননার বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান আমাদের স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্টে আছে। ২০০৯ সালে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন করা হয়েছে। সেখানেও বিধান আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ধর্ম ও আমাদের প্রিয় মহানবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে কুত্সা রটনার জন্য এখন পর্যন্ত চারজন ব্লগারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সবার শাস্তি হবে।
নিরীহ আলেমদের গ্রেপ্তারের তালিকা দিন
শান্তিপ্রিয় নিরপরাধ আলেম ওলামাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, শাস্তিও হয়নি বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইসলাম পবিত্র ধর্ম। কেউ যদি ধর্মকে ব্যবহার করে জঙ্গিবাদী কাজে লিপ্ত হয়, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি হেফাজতের উদ্দেশে বলেন, ‘নিরীহ আলেম ওলামা গ্রেপ্তারের তালিকা থাকলে জানাবেন, ব্যবস্থা নেব।’
ধর্ম পালনে কোথাও বাধা দেয়নি সরকার
বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধা বিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করতে হবে—হেফাজতের এই দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদসহ দেশের কোথাও ধর্ম পালনে কাউকে বাধা দেয়নি সরকার।
মোমবাতিতে অনীহা কেন?
হেফাজতের ইসলামের একটি দাবি হলো, ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে। এই দাবির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, মোমবাতির প্রতি তাঁদের এত অনীহা কেন? বিদ্যুত্ চলে গেলে সবাইকে মোমবাতি জ্বালাতে হয়। মোমবাতি ও মশাল ধর্মবিরোধী কোনো বিষয় নয়। পবিত্র মক্কা শরিফেও তাঁবুতে তাঁবুতে আলোর জন্য মশাল জ্বালানো হতো। ব্যভিচার আমরা পছন্দ করি না। ব্যভিচারের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
সৌদি আরবে অনেক ভাস্কর্য আছে
হেফাজতের আরও একটি দাবি হচ্ছে, মসজিদের নগর ঢাকাকে মূর্তির নগরে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সৌদি আরবে অনেক ভাস্কর্য আছে। এ ব্যাপারে তারা অনেক পারদর্শী। এ ছাড়া সৌদি আরব, আরব আমিরাত ও আরব রাষ্ট্রগুলোতে ভাস্কর্যের উত্কর্ষ সাধিত হয়েছে। মূর্তি বানানো হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজার জন্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে কোনো অশ্লীল ভাস্কর্য তৈরি করা হবে না।
ধর্মের পাশাপাশি পার্থিব শিক্ষা নিতে হবে
ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে—এই দাবির ব্যাপারে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সরকারের সময়ে প্রথম শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে আমরা ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছি। যখন এটা করেছি, তখন তো কেউ এর বিরোধিতা করেন নাই।’ তিনি বলেন, ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি পার্থিব শিক্ষাও নিতে হবে।
নারীর অবমাননা হয়, এমন নীতি নয়
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নারী নীতিতে সংশোধন করে একটি লাইন যুক্ত করা হয়েছে। আমরা নারীর অবমাননা হয়, এমন কোনো নীতি প্রণয়ন করব না।’ তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ইসলাম ধর্ম প্রথম কে গ্রহণ করেছে? হজরত খাদিজা (র.)। তিনি একজন নারী। বিবি আয়শা নবীজির সঙ্গে থেকে যুদ্ধ করেছেন। হজরত খাদিজার ব্যবসা পুরো আবর বিশ্বে সুনাম কুড়িয়েছিল। ইসলামের জন্য যুদ্ধ করতে গিয়ে যিনি প্রথম শহীদ হন, তিনি একজন নারী, তাঁর নাম সুমাইয়া।
ইমাম, খতিবকে হুমকি দিলে ব্যবস্থা নেব
সারা দেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ এবং মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখানোসহ তাঁদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে—এ দাবির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের যদি কোনো ধরনের হুমকি দেওয়া হয়, তাহলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আলেম ওলামাদের নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক প্রচার বন্ধ করা হবে
হেফাজতের অন্যতম একটি দাবি হলো—রেডিও, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় দাড়ি-টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি কালচার নিয়ে হাসি-ঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় খল ও নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে যেন ধর্মের বা ধর্মীয় লোকদের ব্যঙ্গাত্মকভাবে উপস্থাপন না করা হয়, সেজন্য সজাগ দৃষ্টি রাখা হবে। রেডিও-টেলিভিশনে আলেম-ওলামাদের নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কোনো কিছু করা হলে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং তা বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ধর্মের নামে জঙ্গিবাদী কাজ যেন না হয়
পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিষ্টান মিশনারিদের ধর্মান্তকরণসহ সব অপতত্পরতা বন্ধ করতে হবে—হেফাজতের এই দাবির প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পার্বত্য এলাকায় জোর করে ধর্মান্তরিত করা বন্ধে আইন অনুযায়ী কাজ করা হবে। পবিত্র ধর্মের নামে জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড যেন কেউ করতে না পারে, এ জন্য আলেম-ওলামাসহ সবার প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
হেফাজতে ইসলামের ১৩ দাবি
১। সংবিধানে ‘আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিল করতে হবে।
২। আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুত্সা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে।
৩। কথিত শাহবাগী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক-মুরতাদ এবং প্রিয় নবী (সা.)-এর শানে জঘন্য কুত্সা রটনাকারী কুলাঙ্গার ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪। ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
৫। ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৬। সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতত্পরতা বন্ধ করতে হবে।
৭। মসজিদের নগর ঢাকাকে মূর্তির নগরে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করতে হবে।
৮। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধাবিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধা দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
৯। রেডিও, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় দাড়ি-টুপি ও ইসলামী কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসি-ঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় খল ও নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করতে হবে।
১০। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিষ্টান মিশনারিদের ধর্মান্তকরণসহ সব অপতত্পরতা বন্ধ করতে হবে।
১১। রাসুলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদ্রাসাছাত্র এবং তৌহিদি জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং গণহত্যা বন্ধ করতে হবে।
১২। সারাদেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ এবং মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দানসহ তাঁদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।
১৩। অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত সব আলেম-ওলামা, মাদ্রাসাছাত্র ও তৌহিদি জনতাকে মুক্তিদান, দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণসহ দুষ্কৃতকারীদেরকে বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
আজ শুক্রবার গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের ১৩ দফা দাবি নিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি হেফাজতের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে আলোচনা করেন।
সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম আছে
হেফাজতের প্রথম দাবি, সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং ‘কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিল করা’ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম ধর্ম সংবিধান থেকে বাদ যায়নি। বিসমিল্লাহ বলেই সংবিধান শুরু হয়েছে। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম লেখা রয়েছে।
ধর্মের অবমাননার শাস্তির বিধান আছে
আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুত্সা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে, হেফাজতের এই দাবির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধর্মের অবমাননার বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান আমাদের স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্টে আছে। ২০০৯ সালে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন করা হয়েছে। সেখানেও বিধান আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ধর্ম ও আমাদের প্রিয় মহানবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে কুত্সা রটনার জন্য এখন পর্যন্ত চারজন ব্লগারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সবার শাস্তি হবে।
নিরীহ আলেমদের গ্রেপ্তারের তালিকা দিন
শান্তিপ্রিয় নিরপরাধ আলেম ওলামাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, শাস্তিও হয়নি বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইসলাম পবিত্র ধর্ম। কেউ যদি ধর্মকে ব্যবহার করে জঙ্গিবাদী কাজে লিপ্ত হয়, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি হেফাজতের উদ্দেশে বলেন, ‘নিরীহ আলেম ওলামা গ্রেপ্তারের তালিকা থাকলে জানাবেন, ব্যবস্থা নেব।’
ধর্ম পালনে কোথাও বাধা দেয়নি সরকার
বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধা বিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করতে হবে—হেফাজতের এই দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদসহ দেশের কোথাও ধর্ম পালনে কাউকে বাধা দেয়নি সরকার।
মোমবাতিতে অনীহা কেন?
হেফাজতের ইসলামের একটি দাবি হলো, ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে। এই দাবির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, মোমবাতির প্রতি তাঁদের এত অনীহা কেন? বিদ্যুত্ চলে গেলে সবাইকে মোমবাতি জ্বালাতে হয়। মোমবাতি ও মশাল ধর্মবিরোধী কোনো বিষয় নয়। পবিত্র মক্কা শরিফেও তাঁবুতে তাঁবুতে আলোর জন্য মশাল জ্বালানো হতো। ব্যভিচার আমরা পছন্দ করি না। ব্যভিচারের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
সৌদি আরবে অনেক ভাস্কর্য আছে
হেফাজতের আরও একটি দাবি হচ্ছে, মসজিদের নগর ঢাকাকে মূর্তির নগরে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সৌদি আরবে অনেক ভাস্কর্য আছে। এ ব্যাপারে তারা অনেক পারদর্শী। এ ছাড়া সৌদি আরব, আরব আমিরাত ও আরব রাষ্ট্রগুলোতে ভাস্কর্যের উত্কর্ষ সাধিত হয়েছে। মূর্তি বানানো হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজার জন্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে কোনো অশ্লীল ভাস্কর্য তৈরি করা হবে না।
ধর্মের পাশাপাশি পার্থিব শিক্ষা নিতে হবে
ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে—এই দাবির ব্যাপারে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সরকারের সময়ে প্রথম শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে আমরা ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছি। যখন এটা করেছি, তখন তো কেউ এর বিরোধিতা করেন নাই।’ তিনি বলেন, ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি পার্থিব শিক্ষাও নিতে হবে।
নারীর অবমাননা হয়, এমন নীতি নয়
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নারী নীতিতে সংশোধন করে একটি লাইন যুক্ত করা হয়েছে। আমরা নারীর অবমাননা হয়, এমন কোনো নীতি প্রণয়ন করব না।’ তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ইসলাম ধর্ম প্রথম কে গ্রহণ করেছে? হজরত খাদিজা (র.)। তিনি একজন নারী। বিবি আয়শা নবীজির সঙ্গে থেকে যুদ্ধ করেছেন। হজরত খাদিজার ব্যবসা পুরো আবর বিশ্বে সুনাম কুড়িয়েছিল। ইসলামের জন্য যুদ্ধ করতে গিয়ে যিনি প্রথম শহীদ হন, তিনি একজন নারী, তাঁর নাম সুমাইয়া।
ইমাম, খতিবকে হুমকি দিলে ব্যবস্থা নেব
সারা দেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ এবং মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখানোসহ তাঁদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে—এ দাবির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের যদি কোনো ধরনের হুমকি দেওয়া হয়, তাহলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আলেম ওলামাদের নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক প্রচার বন্ধ করা হবে
হেফাজতের অন্যতম একটি দাবি হলো—রেডিও, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় দাড়ি-টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি কালচার নিয়ে হাসি-ঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় খল ও নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে যেন ধর্মের বা ধর্মীয় লোকদের ব্যঙ্গাত্মকভাবে উপস্থাপন না করা হয়, সেজন্য সজাগ দৃষ্টি রাখা হবে। রেডিও-টেলিভিশনে আলেম-ওলামাদের নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কোনো কিছু করা হলে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং তা বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ধর্মের নামে জঙ্গিবাদী কাজ যেন না হয়
পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিষ্টান মিশনারিদের ধর্মান্তকরণসহ সব অপতত্পরতা বন্ধ করতে হবে—হেফাজতের এই দাবির প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পার্বত্য এলাকায় জোর করে ধর্মান্তরিত করা বন্ধে আইন অনুযায়ী কাজ করা হবে। পবিত্র ধর্মের নামে জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড যেন কেউ করতে না পারে, এ জন্য আলেম-ওলামাসহ সবার প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
হেফাজতে ইসলামের ১৩ দাবি
১। সংবিধানে ‘আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিল করতে হবে।
২। আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুত্সা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে।
৩। কথিত শাহবাগী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক-মুরতাদ এবং প্রিয় নবী (সা.)-এর শানে জঘন্য কুত্সা রটনাকারী কুলাঙ্গার ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪। ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
৫। ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৬। সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতত্পরতা বন্ধ করতে হবে।
৭। মসজিদের নগর ঢাকাকে মূর্তির নগরে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করতে হবে।
৮। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধাবিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধা দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
৯। রেডিও, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় দাড়ি-টুপি ও ইসলামী কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসি-ঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় খল ও নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করতে হবে।
১০। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিষ্টান মিশনারিদের ধর্মান্তকরণসহ সব অপতত্পরতা বন্ধ করতে হবে।
১১। রাসুলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদ্রাসাছাত্র এবং তৌহিদি জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং গণহত্যা বন্ধ করতে হবে।
১২। সারাদেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ এবং মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দানসহ তাঁদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।
১৩। অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত সব আলেম-ওলামা, মাদ্রাসাছাত্র ও তৌহিদি জনতাকে মুক্তিদান, দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণসহ দুষ্কৃতকারীদেরকে বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি সম্পর্কে আজ শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে স্ববিরোধী ও পাশ কাটিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করার
চেষ্টা বলে মন্তব্য করেছেন সংগঠনের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী। আজ রাতে
দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে কোনো রকম বিভ্রান্তির শিকার না হয়ে পূর্ণ উদ্যম ও প্রস্তুতি নিয়ে আগামী রোববার ‘ঢাকা অবরোধ’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে বলা হয়েছে। তবে, সাভার দুর্ঘটনায় লাশবাহী গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, উদ্ধার তত্পরতায় নিয়োজিত সব ধরনের যান, দেশি-বিদেশি পরিদর্শকদের গাড়িসহ এ জাতীয় যানবাহন অবরোধের আওতা মুক্ত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।
দীর্ঘ বিবৃতিতে হেফাজতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সব বক্তব্যের জবাব দেন আহমদ শফী। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে কাল শনিবার সকাল ১১টার দিকে লালবাগে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে।
বিবৃতিতে আহমদ শফী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে হেফাজতের ১৩ দফা দাবি সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য কোনো মত ও দিক-নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। বরং বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর বক্তব্যে স্ববিরোধী ব্যাখা ও পাশ কাটিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টাই ছিল বিশেষভাবে লক্ষণীয়। সে কারণেই আমরা আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি যথারীতি বহাল রাখার প্রত্যয় ঘোষণা করছি।’
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে স্ব-বিরোধিতার বহু নজির ফুটে উঠেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার ‘সংবিধানবিরোধী’ ও ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ বলার পরও প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দফার সঙ্গে একমত পোষণ করে প্রচলিত আইনে কী কী ধারা-উপধারা রয়েছে তাও উল্লেখ করেছেন। আবার সংবিধানে ‘আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপনের বিষয়টি পাশ কাটিয়ে ‘রাষ্ট্র ধর্ম’ ও ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ উল্লেখ থাকার কথা বলে ওই মৌলিক বাক্যটি পুণঃস্থাপন করা নিয়ে কোনো কথা বলা হয়নি। ইসলামের অবমাননা ও কটূক্তির বিষয়ে প্রচলিত ‘ধর্ম অবমাননা আইন’ ‘স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট’ এবং ‘তথ্য প্রযুক্তি আইনের’ ধারায় বর্ণিত শাস্তির কথা তুলে ধরলেও সর্বোচ্চ শাস্তির আইন প্রণয়ন বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। গ্রেপ্তার করা চারজন ব্লগারের বিরুদ্ধেও বিদ্যমান আইনে কঠোর কোনো ধারায় মামলা করা হয়নি।
বলা হয়, আলেম উলামা, ইমাম, খতিব ও মাদরাসার ছাত্রদের হয়রানি, হুমকির বিষয়টির সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী অজ্ঞতা প্রকাশ করলেও বাস্তবতা হচ্ছে, এ পর্যন্ত আন্দোলনরত প্রায় দশ জন আলেমকে হত্যা করা হয়েছে। বহু আলেম খতিবকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, বহু মাদ্রাসা বাধ্যতামূলক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর ভাস্কর্য ও মূর্তির মধ্যে ব্যবধান তৈরি করে প্রধানমন্ত্রী যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তার সঙ্গে ইসলামের অবস্থান ও নীতির কোনো সম্পর্ক নেই। এক্ষেত্রে কোনো কোনো আরব দেশের উদাহরণ টেনে ইসলাম ভাস্কর্যকে উত্কর্ষ দান করেছে বলে যে কথা বলা হয়েছে, তা ইসলামের শিল্পনীতি সম্পর্কে একটি ভুল ব্যাখ্যা।
নারীনীতি, নারী-অধিকার, অশ্লীলতা, ব্যভিচার ইত্যাদি বিষয়ে ইসলামী অনুশাসনের প্রশংসা করে আবার নারীনীতির ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ধারার বিষয়গুলো পাশ কাটিয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী।
বিবৃতিতে কোনো রকম বিভ্রান্তির শিকার না হয়ে পূর্ণ উদ্যম ও প্রস্তুতি নিয়ে আগামী রোববার ‘ঢাকা অবরোধ’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে বলা হয়েছে। তবে, সাভার দুর্ঘটনায় লাশবাহী গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, উদ্ধার তত্পরতায় নিয়োজিত সব ধরনের যান, দেশি-বিদেশি পরিদর্শকদের গাড়িসহ এ জাতীয় যানবাহন অবরোধের আওতা মুক্ত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।
দীর্ঘ বিবৃতিতে হেফাজতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সব বক্তব্যের জবাব দেন আহমদ শফী। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে কাল শনিবার সকাল ১১টার দিকে লালবাগে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে।
বিবৃতিতে আহমদ শফী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে হেফাজতের ১৩ দফা দাবি সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য কোনো মত ও দিক-নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। বরং বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর বক্তব্যে স্ববিরোধী ব্যাখা ও পাশ কাটিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টাই ছিল বিশেষভাবে লক্ষণীয়। সে কারণেই আমরা আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি যথারীতি বহাল রাখার প্রত্যয় ঘোষণা করছি।’
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে স্ব-বিরোধিতার বহু নজির ফুটে উঠেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার ‘সংবিধানবিরোধী’ ও ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ বলার পরও প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দফার সঙ্গে একমত পোষণ করে প্রচলিত আইনে কী কী ধারা-উপধারা রয়েছে তাও উল্লেখ করেছেন। আবার সংবিধানে ‘আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপনের বিষয়টি পাশ কাটিয়ে ‘রাষ্ট্র ধর্ম’ ও ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ উল্লেখ থাকার কথা বলে ওই মৌলিক বাক্যটি পুণঃস্থাপন করা নিয়ে কোনো কথা বলা হয়নি। ইসলামের অবমাননা ও কটূক্তির বিষয়ে প্রচলিত ‘ধর্ম অবমাননা আইন’ ‘স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট’ এবং ‘তথ্য প্রযুক্তি আইনের’ ধারায় বর্ণিত শাস্তির কথা তুলে ধরলেও সর্বোচ্চ শাস্তির আইন প্রণয়ন বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। গ্রেপ্তার করা চারজন ব্লগারের বিরুদ্ধেও বিদ্যমান আইনে কঠোর কোনো ধারায় মামলা করা হয়নি।
বলা হয়, আলেম উলামা, ইমাম, খতিব ও মাদরাসার ছাত্রদের হয়রানি, হুমকির বিষয়টির সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী অজ্ঞতা প্রকাশ করলেও বাস্তবতা হচ্ছে, এ পর্যন্ত আন্দোলনরত প্রায় দশ জন আলেমকে হত্যা করা হয়েছে। বহু আলেম খতিবকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, বহু মাদ্রাসা বাধ্যতামূলক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর ভাস্কর্য ও মূর্তির মধ্যে ব্যবধান তৈরি করে প্রধানমন্ত্রী যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তার সঙ্গে ইসলামের অবস্থান ও নীতির কোনো সম্পর্ক নেই। এক্ষেত্রে কোনো কোনো আরব দেশের উদাহরণ টেনে ইসলাম ভাস্কর্যকে উত্কর্ষ দান করেছে বলে যে কথা বলা হয়েছে, তা ইসলামের শিল্পনীতি সম্পর্কে একটি ভুল ব্যাখ্যা।
নারীনীতি, নারী-অধিকার, অশ্লীলতা, ব্যভিচার ইত্যাদি বিষয়ে ইসলামী অনুশাসনের প্রশংসা করে আবার নারীনীতির ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ধারার বিষয়গুলো পাশ কাটিয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী।
'দাওয়াতে ইসলাম' নামে নতুন সংগঠন
'দাওয়াতে ইসলাম' নামে একটি সংগঠন গতকাল আত্মপ্রকাশ করেছে। জাতীয়
প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দিয়ে নয় দফা
দাবিও জানিয়েছেন এর নেতারা। সেই সঙ্গে হেফাজতে ইসলামকে ৫ মে-র অবরোধ
প্রত্যাহারেরও আহবান জানিয়েছেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে ঘোষিত কমিটিতে মাওলানা জহিরুল ইসলাম মিঞাকে (মুস্তাকিম হুজুর) আহ্বায়ক ও সৈয়দ মাওলানা এমদাদ হোসাইনকে সদস্যসচিব হিসেবে রাখা হয়েছে। লিখিত বক্তব্যে মাওলানা জহিরুল ইসলাম মিঞা বলেন, "আমাদের দেশে 'ভালোবাসা দিবস' বা থার্টিফার্স্ট নাইট ছিল না। এ ভালোবাসা দিবস বা থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনের নামে এ দেশে কে বেহায়া ও বেলেল্লাপনার বিষবৃক্ষ রোপণ করেছে আপনারা সবাই তাকে চেনেন। আপনারা সেই নাস্তিক মুরতাদকেও চেনেন, যারা এখন ইসলামী বুদ্ধিজীবী সেজে নেপথ্যে থেকে দেশকে অশান্ত করার বিদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে চলেছেন। এরাই এ দেশের নাস্তিক-মুরতাদদের দীক্ষাগুরু। এসব নাটের গুরুকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে তরুণ প্রজন্মের নাস্তিক্যপনা এক ফুতকারেই উড়ে যেত। তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মওদুদী নিজেকে আলেম বলে দাবি করলেও তিনি ছিলেন ইহুদিদের চর। মওদুদীবাদের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি যতটা না ইসলামের জন্য তার চেয়েও বেশি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের। নতুন এ সংগঠনের সারা দেশ থেকে আলেমদের নিয়ে ৫০১ সদস্যের কমিটি করা হবে বলে জানান নেতারা।
লিংক
সংবাদ সম্মেলনে ঘোষিত কমিটিতে মাওলানা জহিরুল ইসলাম মিঞাকে (মুস্তাকিম হুজুর) আহ্বায়ক ও সৈয়দ মাওলানা এমদাদ হোসাইনকে সদস্যসচিব হিসেবে রাখা হয়েছে। লিখিত বক্তব্যে মাওলানা জহিরুল ইসলাম মিঞা বলেন, "আমাদের দেশে 'ভালোবাসা দিবস' বা থার্টিফার্স্ট নাইট ছিল না। এ ভালোবাসা দিবস বা থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনের নামে এ দেশে কে বেহায়া ও বেলেল্লাপনার বিষবৃক্ষ রোপণ করেছে আপনারা সবাই তাকে চেনেন। আপনারা সেই নাস্তিক মুরতাদকেও চেনেন, যারা এখন ইসলামী বুদ্ধিজীবী সেজে নেপথ্যে থেকে দেশকে অশান্ত করার বিদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে চলেছেন। এরাই এ দেশের নাস্তিক-মুরতাদদের দীক্ষাগুরু। এসব নাটের গুরুকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে তরুণ প্রজন্মের নাস্তিক্যপনা এক ফুতকারেই উড়ে যেত। তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মওদুদী নিজেকে আলেম বলে দাবি করলেও তিনি ছিলেন ইহুদিদের চর। মওদুদীবাদের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি যতটা না ইসলামের জন্য তার চেয়েও বেশি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের। নতুন এ সংগঠনের সারা দেশ থেকে আলেমদের নিয়ে ৫০১ সদস্যের কমিটি করা হবে বলে জানান নেতারা।
লিংক
৬টি প্রবেশপথে অবস্থান নেবে হেফাজত
আগামীকাল ৫ মে ঢাকা অবরোধ করবে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। ১৩ দফা দাবি
আদায়ে ঘোষিত এ কর্মসূচি সফলে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রচারণা ও গণসংযোগসহ যাবতীয়
প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সংগঠনটি। রোববার ফজরের পর থেকেই ঢাকার ৬টি
প্রবেশপথে হেফাজতের নেতাকর্মীরা অবস্থান গ্রহণ করবেন। এরই মধ্যে সারাদেশ
থেকে ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন হেফাজতের অনেক কর্মী। শুক্রবার বিকালেই
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
তিনি হেফাজতের লালবাগ মাদরাসা কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে অবরোধ কর্মসূচির
বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন।
এদিকে হেফাজতে ইসলামের এ অবরোধ কর্মসূচি বানচালে সরকারি মহল থেকে নানা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে। ঢাকায় আসতে বাধা দেয়া হচ্ছে হেফাজত কর্মীদের। বাস ভাড়া দিতে নিষেধ করা হচ্ছে পরিবহন মালিকদের। অবরোধের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো অনুমতিও দেয়া হয়নি। বরং এ কর্মসূচি প্রত্যাহারের জন্য দফায় দফায় আহ্বান জানানো হচ্ছে ১৪ দলীয় জোটের নেতা ও মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে সন্ধ্যায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে হেফাজতের কর্মসূচি স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়। তবে কোনো ষড়যন্ত্রই ৫ মে হেফাজতের ঢাকা অবরোধ ও মহাজাগরণ ঠেকাতে পারবে না বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন সংগঠনের নেতারা।
সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন, আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ইসলাম ধর্ম অবমাননাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আইন পাস, নারী নীতি ও শিক্ষানীতির ইসলামবিরোধী ধারাগুলো বিলুপ্তসহ ১৩ দফা দাবিতে ৬ এপ্রিলের লংমার্চ সমাবেশ থেকে ঢাকা অবরোধের এ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় হেফাজতে ইসলাম। কর্মসূচি সফলের জন্য এরই মধ্যে সারাদেশে সভা-সমাবেশ ও প্রস্তুতিমূলক কর্মকাণ্ড শেষ করেছে সংগঠনটি। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তৌহিদি জনতা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন বলে গতকাল রাজধানীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতারা জানান। সব বাধা উপেক্ষা করে ১৩ দফা দাবিতে কাল ঢাকার ৬টি প্রবেশপথ— যাত্রাবাড়ী থেকে কাচপুর সেতু, যাত্রাবাড়ী থেকে ডেমরা সেতু, পোস্তগোলা বুড়িগঙ্গা সেতু, পুরানঢাকার বাবুবাজার সেতু, আবদুল্লাহপুর-টঙ্গী ব্রিজ ও আমিনবাজারের বলিয়ারপুর এলাকায় হেফাজত নেতাকর্মীরা অবস্থান নেবেন বলেও জানানো হয়। অবস্থানকালে মাইকে বক্তব্যের পাশাপাশি হামদ নাত পরিবেশন করা হবে। তবে এ অবস্থানের সময়সীমা ওইদিনের পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে বলে নেতারা জানান।
এদিকে কাল ঢাকা অবরোধ সফলের আহ্বানে গতকাল রাজধানীসহ সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে হেফাজতে ইসলাম। বাদজুমা এসব বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
অপরদিকে হেফাজতের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করার জন্য গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে আহ্বান জানিয়েছেন তাত্ক্ষনিকভাবে তার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন হেফাজতের আমির আল্লামা আহমদ শফীসহ অন্য নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর এসব বক্তব্য স্ববিরোধী, বিভ্রান্তিমূলক ও কূটকৌশলের আশ্রয় বলে মন্তব্য করেছেন তারা। ৫ তারিখের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি বহাল থাকবে বলেও আল্লামা শফী ঘোষণা দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে আজ সকাল ১১টায় লালবাগে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আল্লামা আহমদ শফী তার সংগঠনের চূড়ান্ত অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন বলে জানা গেছে।
রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলন : গতকাল রাজধানীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক নূর হোসাইন কাসেমী বলেছেন, কোনো ষড়যন্ত্রই কাল হেফাজতের মহাজাগরণ ঠেকাতে পারবে না। ঢাকা অবরোধে কোনো বাধা দিলে বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
সকাল সাড়ে ১১টায় লালবাগ মাদরাসা কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্যে নুর হোসাইন কাসেমী আরও বলেন, ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি সফলে সর্বাত্মক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার তৌহিদি জনতা ঢাকা অভিমুখে রওনা দিয়েছেন এবং অচিরেই আরও লাখ লাখ মানুষ ঢাকা অভিমুখে আসার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী। কিন্তু ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি বানচাল করার জন্য সরকার ও তাদের দলীয় ক্যাডার ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং প্রশাসনের মাধ্যমে নানা ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। সরকার এরই মধ্যে দেশব্যাপী পরিবহন সংস্থাগুলোকে তাদের গাড়ি না চালানোর নির্দেশ দিয়েছে। সারাদেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সরকার দলীয় ক্যাডাররা নানাভাবে হুমকি ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। কিন্তু আমরা সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই, ১৩ দফা মেনে নিন। ভয়ভীতির মাধ্যমে আল্লাহ ও রাসুল প্রেমিকদের দমানো যাবে না। যে কোনো মূল্যে ৫ মে’র ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি সফল করা হবেই ইনশাআল্লাহ। সারাদেশ থেকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের তসবিহ, জায়নামাজ, মিসওয়াক ও শুকনো খাবার নিয়ে ৫ মে ফজরের সময় ঢাকার সবক’টি প্রবেশপথে শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবরোধ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ময়দানে নেমে আসার উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।
৬ এপ্রিলের লংমার্চে বাধা দেয়ার অভিজ্ঞতাকে স্মরণ করিয়ে আল্লামা কাসেমী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা মুসলমান। আপনারা অন্যায়ভাবে ঈমানী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কারও ওপর হাত উঠাবেন না। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি সফলের ব্যাপারে সার্বিক সহায়তা করুন। তিনি বলেন, ইসলাম শ্রমিকদের যে অধিকার দিয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে এদেশে মালিক-শ্রমিকের বৈষম্যের নিরসন হবে। ৫ মে’র অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহারের দাবি না করে সর্বস্তরের শ্রমিক সংগঠন রাজপথে নেমে আসুন। পরিবহন ও নৌযান মালিক শ্রমিকদের ৫ মের আগে সারাদেশ থেকে হেফাজতকর্মীদের ঢাকায় আনার এবং ৫ মে সব ধরনের যানবাহন বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ১৩ দফা বাস্তবায়ন হলে আপনাদের অধিকার সংরক্ষিত হবে। এ জন্য সেদিন ঢাকা অবরোধে মালিক শ্রমিক সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হবে। আর অবরোধ সফলে সর্বস্তরের নারীদের ৫ মে রোজা পালন ও দোয়া করার জন্য আহ্বান জানান।
হেফাজতে ইসলাম সরকারের কাছে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণসহ ১৩ দফা দাবি পেশ করেছে। সরকার ১৩ দফা মানা তো দূরের কথা বরং তা মানা হবে না বলে ঘোষণা দিচ্ছে। সরকারের এহেন মনোভাবে এদেশের কোটি কোটি মুসলমান চরমভাবে ক্ষুব্ধ। আমরা আবারও জানিয়ে দিতে চাই, ক্ষমতায় থাকতে হলে কিংবা যেতে চাইলে ১৩ দফা মেনেই তা সম্ভব হবে, তাছাড়া নয়। আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলন করে যাচ্ছি। ৫ মে’র আগে আমাদের দাবি মানুন, তা না হলে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের মহাজাগরণ ঠেকানো সরকারের জন্য কোনোক্রমেই সম্ভব হবে না। আর তার পুরো দায়ভার সরকারকেই বহন করতে হবে। হেফাজতে ইসলামকে পাশ কাটিয়ে ভিন্ন কিছু করার অপচেষ্টা করা হলে এর জন্য চরম মাশুল দিতে হবে।
তিনি দেশ ও ঈমান রক্ষার এই আন্দোলনে ঢাকা মহানগরের সর্বস্তরের মানুষকে ৫ মে সারাদেশ থেকে আগত অবরোধকারীদের ৬ এপ্রিলের মতো অভ্যর্থনা ও আপ্যায়নের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এবং পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত সর্বস্তরের জনগণকে সেদিন ফজরের আগেই ঢাকার সবকয়টি প্রবেশপথ বন্ধ করে অবস্থানের আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রোববার ভোর ৬টা থেকে ঢাকায় প্রবেশের পথগুলোতে হেফাজতের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেবেন। তবে অবস্থান কর্মসূচি কতক্ষণ পর্যন্ত চলবে তা জানানো হয়নি। যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর সেতু, যাত্রাবাড়ী থেকে ডেমরা সেতু, পোস্তগোলা বুড়িগঙ্গা সেতু, পুরান ঢাকার বাবুবাজার সেতু, আবদুল্লাহপুর-টঙ্গী ব্রিজ ও আমিনবাজারের বলিয়ারপুর ঢাকায় প্রবেশমুখের এ ছয়টি জায়গায় অবরোধ কর্মসূচি চলবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, ঢাকা মহানগর উপদেষ্টা মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা আবদুর রব ইউসূফী, ঢাকা মহানগরের সদস্য সচিব জুনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব মুফতি তৈয়্যব প্রমুখ।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ : কাল ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি সফলের আহ্বানে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করে হেফাজতে ইসলাম। কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, লালবাগ, যাত্রাবাড়ীসহ সংশ্লিষ্ট সব জোনের উদ্যোগে এসব বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি ও পত্রিকার ছাপাখানা খুলে দেয়ারও দাবি জানানো হয়।
কামরাঙ্গীরচর মাদরাসা মাঠে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে খেলাফত আন্দোলনের আমির ও হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা শাহ আহমদুল্লাহ আশরাফ ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয় এবং কাউকে ক্ষমতা থেকে উত্খাত ও কাউকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়। এ অবরোধ কর্মসূচি আল্লাহ-রাসূল (সা.) ও ইসলামের অবমাননার প্রতিবাদে নাস্তিক-ব্লগারদের বিরুদ্ধে ঈমানদারদের আন্দোলন। ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীনদের ভূমিকাই প্রমাণ করবে তারা ঈমানদারদের পক্ষে না নাস্তিকদের পক্ষে? সরকার প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করে জাতির সঙ্গে ধোঁকাবাজি করছে।
হেফাজতে ইসলাম কামরাঙ্গীরচর থানা আমির মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ জাফরুল্লাহ খান, মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবিব, মুফতি মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্মাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, ঢাকা মহানগরী যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা আবদুর রব ইউসূফী, যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা মুজিবুুর রহমান হামিদী, যুগ্ম সদস্য সচিব অধ্যাপক আবদুল করিম, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা ফখরুল ইসলাম, মাওলানা আবু জাফর কাসেমী, মাওলানা সাইফুল ইসলাম সুনামগঞ্জী, মুফতি জাফরুল্লাহ মাহবুব, মুফতি জাফর আহমদ, মুফতি জসিম উদ্দীন ও মাওলানা আবদুর রহমান বেতাকী প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন মাওলানা সুলতান মহিউদ্দীন।
বাদ জুমা খিলগাঁও জোনের উদ্যোগে বাসাবো খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজতের নায়েবে আমির মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস। বক্তব্য রাখেন সংগঠনের নেতা মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, মাওলানা আবদুর রব ইউসূফী, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী, মাওলানা আজিজুল ইসলাম ইসলামাবাদী প্রমুখ।
হেফাজতে ইসলাম লালবাগ জোন আয়োজিত সমাবেশে নেতারা বলেন, হেফাজতের ১৩ দফা দাবি দিয়ে সরকারি মদতে একটি কুচক্রী মহল বিভ্রান্তি ছড়িয়ে নারী সমাজকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি সফল করে তাদের দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে। তারা আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করে বলেন, অবিলম্বে নবীপ্রেমিক মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি না দিলে সারাদেশে গণবিস্ফোরণ ঘটবে। লালবাগ জোনের আহ্বায়ক মাওলানা জসিম উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাদ জুমা চকবাজার শাহী মসজিদের পূর্ব গেটে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী, মুফতি তৈয়্যব হোসাইন, মাওলানা শেখ লোকমান হোসাইন, আলহাজ জামাল নাসের চৌধুরী, মাওলানা আজিজুর রহমান, মাওলানা মিনহাজুদ্দীন, মাওলানা সাইফুল ইসলাম প্রমুখ। বক্তব্য শেষে বিশাল একটি মিছিল বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
বাদ জুমা মিরপুরের ১ নম্বর গোল চত্বর থেকে মাওলানা মোস্তফা আজাদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বৃহত্তর মিরপুর হেফাজতে ইসলাম। মিছিলপূর্ব সমাবেশে নেতারা বলেন, সারাদেশে ইসলামী জনতা আজ ১৩ দফার দাবি ফুঁসে উঠেছে। যদি ৫ মের আগে এই দাবি মানা না হয় তাহলে ১৩ দফার আন্দোলন এক দফায় রূপ নিতে পারে।
মাওলানা গাজী ইয়াকুবের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন মাওলানা কারি আবদুল খালেক, মাওলানা লোকমান মাজহারী, মাওলানা আবদুল হাই ফারুকী, মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ মাসুম, মাওলানা নাছির উদ্দীন ভূঁইয়া, মাওলানা রবিউল্লাহ, মাওলানা হামেদ গাহেরী প্রমুখ। সমাবেশ শেষে প্রায় ১০ হাজার লোকের একটি বিশাল মিছিল ১নং গোল চত্বর থেকে ১০নং গোল চত্বরে গিয়ে দোয়ার মাধ্যমে শেষ হয়।
এছাড়া বাদ জুমা মোহাম্মদপুর জোনে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মাওলানা আবদুর রউফ ইউসূফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মুফতি মাহফুজুল হক, মাওলানা আবদুর রব ইউসূফী, মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, মাওলানা আহমদ আলী, মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানী, ঢাকা মহানগরী নেতা মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, প্রিন্সিপাল মাওলানা ফারুক আহমদ, প্রিন্সিপাল মাওলানা তালহা, প্রিন্সিপাল মাওলানা যুবায়ের প্রমুখ। পরে বিশাল একটি মিছিল বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
খেলাফতে ইসলামী : ৫ মে হেফাজতে ইসলামের ডাকে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন খেলাফতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী ও মহাসচিব মাওলানা ফজলুর রহমান। গতকাল এক বিবৃতিতে তারা বলেন, বর্তমান সরকার মুসলমানদের ইমান নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে শুরু করেছে। নাস্তিক-মুরতাদ বেষ্টিত সরকার হেফাজতের ১৩ দফা দাবি নিয়ে মিথ্যাচার করে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বাংলাদেশকে ইসলামশূন্য করতে চায়।
এদিকে হেফাজতে ইসলামের এ অবরোধ কর্মসূচি বানচালে সরকারি মহল থেকে নানা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে। ঢাকায় আসতে বাধা দেয়া হচ্ছে হেফাজত কর্মীদের। বাস ভাড়া দিতে নিষেধ করা হচ্ছে পরিবহন মালিকদের। অবরোধের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো অনুমতিও দেয়া হয়নি। বরং এ কর্মসূচি প্রত্যাহারের জন্য দফায় দফায় আহ্বান জানানো হচ্ছে ১৪ দলীয় জোটের নেতা ও মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে সন্ধ্যায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে হেফাজতের কর্মসূচি স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়। তবে কোনো ষড়যন্ত্রই ৫ মে হেফাজতের ঢাকা অবরোধ ও মহাজাগরণ ঠেকাতে পারবে না বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন সংগঠনের নেতারা।
সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন, আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ইসলাম ধর্ম অবমাননাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আইন পাস, নারী নীতি ও শিক্ষানীতির ইসলামবিরোধী ধারাগুলো বিলুপ্তসহ ১৩ দফা দাবিতে ৬ এপ্রিলের লংমার্চ সমাবেশ থেকে ঢাকা অবরোধের এ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় হেফাজতে ইসলাম। কর্মসূচি সফলের জন্য এরই মধ্যে সারাদেশে সভা-সমাবেশ ও প্রস্তুতিমূলক কর্মকাণ্ড শেষ করেছে সংগঠনটি। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তৌহিদি জনতা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন বলে গতকাল রাজধানীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতারা জানান। সব বাধা উপেক্ষা করে ১৩ দফা দাবিতে কাল ঢাকার ৬টি প্রবেশপথ— যাত্রাবাড়ী থেকে কাচপুর সেতু, যাত্রাবাড়ী থেকে ডেমরা সেতু, পোস্তগোলা বুড়িগঙ্গা সেতু, পুরানঢাকার বাবুবাজার সেতু, আবদুল্লাহপুর-টঙ্গী ব্রিজ ও আমিনবাজারের বলিয়ারপুর এলাকায় হেফাজত নেতাকর্মীরা অবস্থান নেবেন বলেও জানানো হয়। অবস্থানকালে মাইকে বক্তব্যের পাশাপাশি হামদ নাত পরিবেশন করা হবে। তবে এ অবস্থানের সময়সীমা ওইদিনের পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে বলে নেতারা জানান।
এদিকে কাল ঢাকা অবরোধ সফলের আহ্বানে গতকাল রাজধানীসহ সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে হেফাজতে ইসলাম। বাদজুমা এসব বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
অপরদিকে হেফাজতের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করার জন্য গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে আহ্বান জানিয়েছেন তাত্ক্ষনিকভাবে তার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন হেফাজতের আমির আল্লামা আহমদ শফীসহ অন্য নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর এসব বক্তব্য স্ববিরোধী, বিভ্রান্তিমূলক ও কূটকৌশলের আশ্রয় বলে মন্তব্য করেছেন তারা। ৫ তারিখের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি বহাল থাকবে বলেও আল্লামা শফী ঘোষণা দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে আজ সকাল ১১টায় লালবাগে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আল্লামা আহমদ শফী তার সংগঠনের চূড়ান্ত অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন বলে জানা গেছে।
রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলন : গতকাল রাজধানীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক নূর হোসাইন কাসেমী বলেছেন, কোনো ষড়যন্ত্রই কাল হেফাজতের মহাজাগরণ ঠেকাতে পারবে না। ঢাকা অবরোধে কোনো বাধা দিলে বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
সকাল সাড়ে ১১টায় লালবাগ মাদরাসা কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্যে নুর হোসাইন কাসেমী আরও বলেন, ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি সফলে সর্বাত্মক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার তৌহিদি জনতা ঢাকা অভিমুখে রওনা দিয়েছেন এবং অচিরেই আরও লাখ লাখ মানুষ ঢাকা অভিমুখে আসার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী। কিন্তু ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি বানচাল করার জন্য সরকার ও তাদের দলীয় ক্যাডার ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং প্রশাসনের মাধ্যমে নানা ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। সরকার এরই মধ্যে দেশব্যাপী পরিবহন সংস্থাগুলোকে তাদের গাড়ি না চালানোর নির্দেশ দিয়েছে। সারাদেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সরকার দলীয় ক্যাডাররা নানাভাবে হুমকি ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। কিন্তু আমরা সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই, ১৩ দফা মেনে নিন। ভয়ভীতির মাধ্যমে আল্লাহ ও রাসুল প্রেমিকদের দমানো যাবে না। যে কোনো মূল্যে ৫ মে’র ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি সফল করা হবেই ইনশাআল্লাহ। সারাদেশ থেকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের তসবিহ, জায়নামাজ, মিসওয়াক ও শুকনো খাবার নিয়ে ৫ মে ফজরের সময় ঢাকার সবক’টি প্রবেশপথে শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবরোধ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ময়দানে নেমে আসার উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।
৬ এপ্রিলের লংমার্চে বাধা দেয়ার অভিজ্ঞতাকে স্মরণ করিয়ে আল্লামা কাসেমী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা মুসলমান। আপনারা অন্যায়ভাবে ঈমানী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কারও ওপর হাত উঠাবেন না। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি সফলের ব্যাপারে সার্বিক সহায়তা করুন। তিনি বলেন, ইসলাম শ্রমিকদের যে অধিকার দিয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে এদেশে মালিক-শ্রমিকের বৈষম্যের নিরসন হবে। ৫ মে’র অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহারের দাবি না করে সর্বস্তরের শ্রমিক সংগঠন রাজপথে নেমে আসুন। পরিবহন ও নৌযান মালিক শ্রমিকদের ৫ মের আগে সারাদেশ থেকে হেফাজতকর্মীদের ঢাকায় আনার এবং ৫ মে সব ধরনের যানবাহন বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ১৩ দফা বাস্তবায়ন হলে আপনাদের অধিকার সংরক্ষিত হবে। এ জন্য সেদিন ঢাকা অবরোধে মালিক শ্রমিক সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হবে। আর অবরোধ সফলে সর্বস্তরের নারীদের ৫ মে রোজা পালন ও দোয়া করার জন্য আহ্বান জানান।
হেফাজতে ইসলাম সরকারের কাছে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণসহ ১৩ দফা দাবি পেশ করেছে। সরকার ১৩ দফা মানা তো দূরের কথা বরং তা মানা হবে না বলে ঘোষণা দিচ্ছে। সরকারের এহেন মনোভাবে এদেশের কোটি কোটি মুসলমান চরমভাবে ক্ষুব্ধ। আমরা আবারও জানিয়ে দিতে চাই, ক্ষমতায় থাকতে হলে কিংবা যেতে চাইলে ১৩ দফা মেনেই তা সম্ভব হবে, তাছাড়া নয়। আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলন করে যাচ্ছি। ৫ মে’র আগে আমাদের দাবি মানুন, তা না হলে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের মহাজাগরণ ঠেকানো সরকারের জন্য কোনোক্রমেই সম্ভব হবে না। আর তার পুরো দায়ভার সরকারকেই বহন করতে হবে। হেফাজতে ইসলামকে পাশ কাটিয়ে ভিন্ন কিছু করার অপচেষ্টা করা হলে এর জন্য চরম মাশুল দিতে হবে।
তিনি দেশ ও ঈমান রক্ষার এই আন্দোলনে ঢাকা মহানগরের সর্বস্তরের মানুষকে ৫ মে সারাদেশ থেকে আগত অবরোধকারীদের ৬ এপ্রিলের মতো অভ্যর্থনা ও আপ্যায়নের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এবং পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত সর্বস্তরের জনগণকে সেদিন ফজরের আগেই ঢাকার সবকয়টি প্রবেশপথ বন্ধ করে অবস্থানের আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রোববার ভোর ৬টা থেকে ঢাকায় প্রবেশের পথগুলোতে হেফাজতের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেবেন। তবে অবস্থান কর্মসূচি কতক্ষণ পর্যন্ত চলবে তা জানানো হয়নি। যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর সেতু, যাত্রাবাড়ী থেকে ডেমরা সেতু, পোস্তগোলা বুড়িগঙ্গা সেতু, পুরান ঢাকার বাবুবাজার সেতু, আবদুল্লাহপুর-টঙ্গী ব্রিজ ও আমিনবাজারের বলিয়ারপুর ঢাকায় প্রবেশমুখের এ ছয়টি জায়গায় অবরোধ কর্মসূচি চলবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, ঢাকা মহানগর উপদেষ্টা মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা আবদুর রব ইউসূফী, ঢাকা মহানগরের সদস্য সচিব জুনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব মুফতি তৈয়্যব প্রমুখ।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ : কাল ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি সফলের আহ্বানে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করে হেফাজতে ইসলাম। কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, লালবাগ, যাত্রাবাড়ীসহ সংশ্লিষ্ট সব জোনের উদ্যোগে এসব বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি ও পত্রিকার ছাপাখানা খুলে দেয়ারও দাবি জানানো হয়।
কামরাঙ্গীরচর মাদরাসা মাঠে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে খেলাফত আন্দোলনের আমির ও হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা শাহ আহমদুল্লাহ আশরাফ ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয় এবং কাউকে ক্ষমতা থেকে উত্খাত ও কাউকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়। এ অবরোধ কর্মসূচি আল্লাহ-রাসূল (সা.) ও ইসলামের অবমাননার প্রতিবাদে নাস্তিক-ব্লগারদের বিরুদ্ধে ঈমানদারদের আন্দোলন। ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীনদের ভূমিকাই প্রমাণ করবে তারা ঈমানদারদের পক্ষে না নাস্তিকদের পক্ষে? সরকার প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করে জাতির সঙ্গে ধোঁকাবাজি করছে।
হেফাজতে ইসলাম কামরাঙ্গীরচর থানা আমির মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ জাফরুল্লাহ খান, মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবিব, মুফতি মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্মাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, ঢাকা মহানগরী যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা আবদুর রব ইউসূফী, যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা মুজিবুুর রহমান হামিদী, যুগ্ম সদস্য সচিব অধ্যাপক আবদুল করিম, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা ফখরুল ইসলাম, মাওলানা আবু জাফর কাসেমী, মাওলানা সাইফুল ইসলাম সুনামগঞ্জী, মুফতি জাফরুল্লাহ মাহবুব, মুফতি জাফর আহমদ, মুফতি জসিম উদ্দীন ও মাওলানা আবদুর রহমান বেতাকী প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন মাওলানা সুলতান মহিউদ্দীন।
বাদ জুমা খিলগাঁও জোনের উদ্যোগে বাসাবো খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজতের নায়েবে আমির মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস। বক্তব্য রাখেন সংগঠনের নেতা মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, মাওলানা আবদুর রব ইউসূফী, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী, মাওলানা আজিজুল ইসলাম ইসলামাবাদী প্রমুখ।
হেফাজতে ইসলাম লালবাগ জোন আয়োজিত সমাবেশে নেতারা বলেন, হেফাজতের ১৩ দফা দাবি দিয়ে সরকারি মদতে একটি কুচক্রী মহল বিভ্রান্তি ছড়িয়ে নারী সমাজকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি সফল করে তাদের দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে। তারা আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করে বলেন, অবিলম্বে নবীপ্রেমিক মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি না দিলে সারাদেশে গণবিস্ফোরণ ঘটবে। লালবাগ জোনের আহ্বায়ক মাওলানা জসিম উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাদ জুমা চকবাজার শাহী মসজিদের পূর্ব গেটে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী, মুফতি তৈয়্যব হোসাইন, মাওলানা শেখ লোকমান হোসাইন, আলহাজ জামাল নাসের চৌধুরী, মাওলানা আজিজুর রহমান, মাওলানা মিনহাজুদ্দীন, মাওলানা সাইফুল ইসলাম প্রমুখ। বক্তব্য শেষে বিশাল একটি মিছিল বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
বাদ জুমা মিরপুরের ১ নম্বর গোল চত্বর থেকে মাওলানা মোস্তফা আজাদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বৃহত্তর মিরপুর হেফাজতে ইসলাম। মিছিলপূর্ব সমাবেশে নেতারা বলেন, সারাদেশে ইসলামী জনতা আজ ১৩ দফার দাবি ফুঁসে উঠেছে। যদি ৫ মের আগে এই দাবি মানা না হয় তাহলে ১৩ দফার আন্দোলন এক দফায় রূপ নিতে পারে।
মাওলানা গাজী ইয়াকুবের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন মাওলানা কারি আবদুল খালেক, মাওলানা লোকমান মাজহারী, মাওলানা আবদুল হাই ফারুকী, মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ মাসুম, মাওলানা নাছির উদ্দীন ভূঁইয়া, মাওলানা রবিউল্লাহ, মাওলানা হামেদ গাহেরী প্রমুখ। সমাবেশ শেষে প্রায় ১০ হাজার লোকের একটি বিশাল মিছিল ১নং গোল চত্বর থেকে ১০নং গোল চত্বরে গিয়ে দোয়ার মাধ্যমে শেষ হয়।
এছাড়া বাদ জুমা মোহাম্মদপুর জোনে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মাওলানা আবদুর রউফ ইউসূফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মুফতি মাহফুজুল হক, মাওলানা আবদুর রব ইউসূফী, মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, মাওলানা আহমদ আলী, মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানী, ঢাকা মহানগরী নেতা মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, প্রিন্সিপাল মাওলানা ফারুক আহমদ, প্রিন্সিপাল মাওলানা তালহা, প্রিন্সিপাল মাওলানা যুবায়ের প্রমুখ। পরে বিশাল একটি মিছিল বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
খেলাফতে ইসলামী : ৫ মে হেফাজতে ইসলামের ডাকে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন খেলাফতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী ও মহাসচিব মাওলানা ফজলুর রহমান। গতকাল এক বিবৃতিতে তারা বলেন, বর্তমান সরকার মুসলমানদের ইমান নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে শুরু করেছে। নাস্তিক-মুরতাদ বেষ্টিত সরকার হেফাজতের ১৩ দফা দাবি নিয়ে মিথ্যাচার করে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বাংলাদেশকে ইসলামশূন্য করতে চায়।
আল্লামা আহমদে শফী'র "জীবন ও র্কম"
আল্লামা আহমদে শফী'র "জীবন ও র্কম"
সৃষ্টির সূচনাকাল থেকেই আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কচ্যুত মানবজাতিকে সত্য, সুন্দর কল্যাণ ও মুক্তির আলোকিত তুলে আনার জন্য ওয়াজ-নসিহত, শিক্ষা ও তরবিয়্যতের মিশনে নিয়োজিত থেকেছেন নবী-রাসূলের উত্তরসূরি আলিম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, অলি-আউলিয়া। বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন :
’(হে মুহাম্মদ সা.) আপনি (মানবজাতিকে) হিকমাত ও সুন্দর উপদেশ প্রদানের মাধ্যমে আপনার প্রভুর পথে আহবান করুন।’
আল্লাহ প্রদত্ত এ দায়িত্ব পালনকে জীবনের প্রধান লক্ষ্যরুপে নির্ধারণ করেছেন এবং উদ্দেশ্যকে সফল করতে পার্থিব সম্পদ-ঐশ্বর্য, সুখ-স্বাচ্ছন্দ ও যাবতীয় লোভ-লালসা, ভয়ভীতি, তিরস্কার-ভৎর্সনা উপেক্ষা করে হকের দাওয়াতী মশাল প্রজ্জ্বলিত রেখেছেন। কেয়ামত পর্যন্ত ইনশা’আল্লাহ এই প্রদীপ আলো ছড়াবে। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন,
’আমার উম্মতের একটি দল সর্বাবস্থায় সত্যেও ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে, শত্রুরা তাদেও কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’
সুতরাং কোনো শতাব্দী, কোনো যুগ সত্যপন্থী এই পবিত্র দলের তৎপরতাবিহীন থাকবে না। প্রত্যেক যুগের এদেও একটি কাফেলা থাকবে; যারা ইসলামের প্রচার, উপস্থাপন ও আল্লাহর বাণীকে সর্বোচ্চে তুলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। আল্লাহর পথের দাঈ ও রাসূলের আদর্শেও পতাকাবাহী দীনের এই সৈনিকরা পৃথিবীর মহামূল্যবান সম্পদ। জনসমাজে, ইতিহাসের পাতায় ও মানুষের হৃদয়ে তারা চিরদিন রাজত্ব করেন, ইহজগত থেকে শারীরিকভাবে লোকান্তরিত হয়েও জগতে তাঁরা বেঁচে থাকেন চিরকাল।
উপমাহাদেশের এমন ক্ষণজন্ম মহাপুরুষদের অন্যতম হলেন, দেশবরেণ্য আলিমেদীন, অলিয়ে কামেল, শায়খুল ইসলাম হযরত আল্লামা হুসাইন আহমদ মাদানীর (রাহ.) অন্যতম খলিফা, দেশের প্রাচীন ও বৃহৎ দীনি দরসেগাহ জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর মুহতামিম, শায়খুল আল্লামা শাহ আহমদ শফী। যার কৈশৌর, যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব আর বার্ধক্য ইলম, আমল, ইখলাস (আত্মশুদ্ধি), দাওয়াতের পূণ্যময় আলোয় উদ্ভাসিত। গোটা জাতির অবিসংবাদিত এই আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক একাধারে মেধাবী আলিম, সফল শিক্ষক, পরিশুদ্ধ সাধক, দূরদর্শী সমাজসংস্কারক, সংযমী, বিনয়ী, সদালাপী, মিষ্টভাষী, যু্ক্তিবাদী, উদার ও পরম স্নেহবৎসল এক জ্যোর্তিময় ব্যক্তিত্ব।
পঙ্কিলতার আবর্তে ডুবে যাওয়া সমাজে আত্মশুদ্ধির মঞ্চে শুদ্ধতার ছড়ি হাতে এক বিস্ময়কর ব্যক্তিত্বের ধীর অথচ দৃঢ় কদমে অগ্রসরমান এক শান্ত-সমাহিত ব্যক্তিত্বের আলেখ্য পাঠকের হাতে তুলে দিতে চাই। ভক্তপ্রাণের হৃদয়নদে দু’কুল ছাপিয়ে বহমান অঢেল প্রশান্তির শূর্তপ্রতীক শ্বেতশুভ্র পোষাকে অনিন্দ্যসুন্দর এক অসাধারণ মানুষের কাহিনী হয়রত আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব (দা.বা.) এই সংক্ষিপ্ত ’জীবন কথা’।
জন্ম, বেড়ে ওঠা শিক্ষা-দীক্ষা পর্ব
১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ১৩৫১ হিজরী সালে বার আউলিয়ার পূর্ণভুমি বীর চট্টলার রাঙ্গুনিয়া থানাধীন পাখিয়ার টিলা নামক গ্রামে এক অভিজাত, সম্ভ্রান্ত ও ঐতিহ্যবাহী দীনদান পরিবারে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর জন্ম। তাঁর ভাগ্যবান পিতা জনাব বরকত আলী ও রতœগর্ভা মাতা মেহেরুন নেসা বেগম। নবজাতক আহমদ শফীর জন্মের পর মা-বাবা তাদের নয়নমনি, প্রিয় সন্তানকে মুসলিম উম্মাহর পথনির্দেশক হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন বুনতে থাকেন। মহান আল্লাহ, তাঁদের এ মহৎ স্বপ্ন অপূর্ণ রাখেননি। শৈশবে তাঁর পিতা-মাতা শিশু আহমদ শফীকে পবিত্র কুরআন শিক্ষা দেবার মৌলভী আজিজুর রহমানের কাছে প্রেরণ করেন। সমান্তরালে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গেই চতুর্থ শ্রেণী পর্যনত্ সাধারণ শিক্ষার পাঠক্রম সম্পন্ন করেন। এরপর সরফভাটা মাদ্রাসায় প্রাথমিক কিতাবাদি অধ্যয়ন শুরু করেন। ছোট বেলা থেকেই অত্যন্ত ন¤্র, বিনয়ী, চিন্তাশীল, প্রখর মেধাবী, তীক্ষèধীরশক্তির, অধিকারী হওয়া বয়সেই তিনি কুরআনের কারিমের নাজার, প্রাথমিক শিক্ষাস্তর কৃতিত্বের সঙ্গে সমাপ্ত করেন। অতঃপর কিশোর আহমদ শফী মাধ্যমিক স্তরের পড়ালেখার উদ্দেশ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামের এতিহ্যবাহী প্রাচীর ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল-জামিয়া আল আরবিয়া জিরি-তে ভর্তি হন। সেখানে ৫/৬ মাস অধ্যয়ন করার পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঢংকা বেজে উঠার পরিপ্রেক্ষিতে ১৩৬১ হিজরীতে তাাঁর শ্রদ্ধাস্পদ হিতাকাক্সক্ষী হাফেজ ইমতিয়াজের প্রচেষ্টায় এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলূম হাটহাজারীতে ভর্তি হন। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১০ বছর। দশ বছরের বালক আহমদ শফীকে এ বয়সেই শোক সাগরে ভাসিয়ে মাতা-পিতা দু’জন পরপর ইন্তেকালা করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)।
দারুল উলূম হাটহাজারীতে তিনি টানা দশ বছর আত্মত্যাগ, কঠোর ধৈর্য, সদাচার, লেখাপড়ায় গভীর অভিনিবেশ ইত্যাদি গুণাবলির কারণে উস্তাদমহলের বিশেষ স্নেহভাজন ছাত্রে পরিণত হন। এখানে এক দশক অতিক্রান্ত হল। সম-সাময়িক বিজ্ঞ আলিমদের স্নেহধন্য সান্নিধ্যে থেকে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ের দক্ষ উস্তাদদের প্রত্যক্ষ তত্ত্ববধানে আরবি সাহিত্য, ব্যাকরণ, নাহু-সরফ, ইলমে ফিকহ, মানতিক (যুক্তিবিদ্যা), দর্শন, বালাগাত (আরবী ভাষার অলঙ্কারশাস্ত্র) প্রভৃতি বিষয়ে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন।
দারুল উলূম মুইনুল ইসলাম হাটহাজারীতে তিনি দেশের শীর্ষ আলিম ও বুজর্গ ব্যক্তিত্বগণের কাছে সরাসরি শিক্ষাগ্রহণের সৌভাজ্য অর্জন করেরন। তাঁর উস্তাদগণের মধ্যে খ্যাতিমান আলিমেদীন, সমাজসংস্কারক, উপমহাদেশের প্রখ্যাত আইনবিশারদ আল্লামা মুফতিয়ে আযম হযরত মাওলানা ফয়েজুল্লাহ (রাহ.), শায়খুল হাদিস আল্লামা সুফী আবদুল কাইয়ুম (রাহ.), শায়খুল আদব আল্লামা মুহাম্মদ আলী নিজামপুরী (রাহ.) ও আল্লামা শায়খ আবুল হাসান (রাহ.) এর নাম প্রণিধানযোগ্য।
উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে দারুল উলূম দেওবন্দ যাত্রা
নবীপ্রেমিক এই বুজর্গের বল্যকাল, প্রাথমিক ও উচ্চশিক্ষার সময়-প্রবাহ ছিল, বৈচিত্রময় ও চাঞ্চল্যকর ঘটনায় পূর্ণ। ১৩৭১ হিজরী সালে তিনি উচ্চ শিক্ষার অদম্য আগ্রহ ও জ্ঞানার্জনের প্রবল তৃষ্ণা নিয়ে ছুটে যান উপমহাদেশের বৃহত্তম ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্র, ঐতিহ্যবাহী হাদিস শিক্ষার পাদপীঠ, জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্যতম সূতিকার দারুল উলূম দেওবন্দে। দারুল উলূম দেওবন্দে তিনি হাদিস, তাফসীর প্রভৃতি উচ্চতর বিশেষায়িত কোর্স সম্পন্ন করেন। দারুল উলূম দেওবন্দে অধ্যয়নকালে তিনি যাঁদের সংশ্রব লাভে করেন তাদের সর্বাগ্রে যার নাম উল্লেখ করতে হয় তিনি হলেন, শায়খুল আরব ওয়াল আজম, আওলাদে রাসুল সা., যুগশ্রেষ্ঠ ও বিশ্ববরেণ্য মুহাদ্দিস, জ্ঞান ও তাকওয়ার অনন্য প্রতীক, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অকুতোভয় সিপাহসালার, মুজাহিদে মিল্লাত, শায়খুল ইসলাম হযরত আল্লামা হুসাইন আহমদ মাদানীর (রাহ.)। অধ্যয়নরত অবস্থায়ই তিনি হযরত মাদাীর হাতে বায়আত গ্রহণ করে খেলাফতপ্রাপ্তির সৌভাগ্য অর্জন করেন।
দারুল উলুম অপরাপর উস্তাদগণ হলেন, হযরত মাওলানা ইব্্রাহিম বলিয়াভী (রাহ.), হযরত মাওলানা ফখরুল হাসান (রাহ.), তিরমিযী ও আবু দাউদ শরীফের উস্তাদ শয়খুল আদব মাওলানা ই’জাজ আলী রাহ.), নাসাঈ শরীফের উস্তাদ হযরত মাওলানা ফখরুল হাসান (রাহ.), মুসলিম শরীফের উস্তাদ হযরত মাওলানা ইবরাহীম বলিয়াভী (রাহ.), তাহাভী শরীফের উস্তাদ হযরত মাওলানা জহিরুল হাসান (রাহ.), মুয়াত্তা মালেকের উস্তাদ হযরত মাওলানা জলিল আহমদ (রাহ.)।
ইলম, আমল আধ্যাত্মিকতায় ধন্য এই মনীষী একাধারে ৪ বছর বিরামহীন অধ্যয়ন ও বিশ্ববিখ্যাত আসাতিযায়ে কেরামের খেদমত ও তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণের মাধ্যমে হাদিস, তাফসীর, ফিক্হশাস্ত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে পান্ডিত্য অর্জন যুগের অন্যতম শীর্ষ মুহাদ্দিস আল্লামা মাদানীর ইলমী ও আমলী প্রতিনিধি হয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও দারুল উলুম হাটহাজারীতে শিক্ষকতা
দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর হযরত তাঁর পরম হিতাকাক্সক্ষী উস্তাদ দারূল উলূম হাটহাজারীর তৎকালীন মুহতামিম আল্লামা শাহ আবদুল ওয়াহহাব (রাহ,) এর সাথে সাক্ষাত করেন। আল্লামা আবদুল ওয়াহহাব তাঁর চরিত্র মাধুরী, গুণাবলি, জ্ঞান, প্রজ্ঞা, পান্ডিত্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি উৎকৃষ্ট বোধশক্তি, সততা, উদারতা, আত্মত্যাগের মানসিকতা, ইখলাস, কর্তব্যনিষ্ঠা, দায়িত্বসচেতনতা সর্বোপরি ইলমের গভীরতা অবলোকন করে খুবই প্রীত ও বিমোহিত হন। ফলে তিনি প্রিয় শিষ্যকে জামিয়ার শিক্ষক পদে নিয়োগ দেন। আল্লাহপ্রেমের লক্ষ্যপানে অবিশ্রান্ত ছুটে চলা অভিযাত্রী, চিরপ্রত্যয়ী, মননশীল এ তরুণ আলিম এ জামিয়া থেকে তাঁর অধ্যাপনার কথা পুরো জামিয়া ছড়িয়ে পড়ে অল্পদিনের মধ্যেই। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ইলমের তৃষ্ণার্ত সন্ধানী মৌমাছিরা ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসে জামিয়ায়। পাশাপশি তিনি নবী আদর্শের প্রতিচ্ছবিরুপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারার ফলেই নানা শ্রেণী-পেশা মানুষ আত্মশুদ্ধি ও আত্মিক উন্নয়নের তৃষ্ণা নিবারণে তাঁর কাছে ছুটে আসে সবসময়।
জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুইনুল ইসলাম হাটহাজারীর পরিচালক
১৪০৭ হিজরী সালে তদানীন্তন জামিয়ার মুহতামিম আল্লামা হামেদ ৯রাহ.) পরলোক গমন করলে জামিয়ার সর্বোচ্চ মজলিসে শুরার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জামিয়া পরিচালনার গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয় বর্তমান মুহতামিম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর উপর। হযরতের দক্ষতাপূর্ণ পরিচালনায় এ পর্যন্ত জামিয়া আহলিয়া হাটহাজারীর ইলমী, আমলী, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রভূতি উন্নতি সাধিত হয়। বর্তমানে তিনি পরিচালকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জামিয়ার শায়খুল হাদিসেরও দায়িত্ব আঞ্জাম দিচ্ছেন। দারুল উলুম মুইনুল ইসলাম হাটহাজারী তাঁর আমলেই ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে।
ঘযরতের সফল উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় দারুল উলূমের ব্যাপক সম্প্রসারণ ও সংস্কারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ছাত্রদের আবাসন সঙ্কট নিরসনকল্পে বহু আবাসিক ছাত্রাবাস ভবন, দারুল হাদিস সম্প্রসারণ, জামিয়ার উত্তর পাশে তিন তলা বিশিষ্ট নতুর জামে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। রেলওয়ে থেকে পরিত্যক্ত ভূমি স্থায়ী লিজ নিয়ে সেখানে নির্মিত হয়েছে ৬ তলা বিশিষ্ট দু’টি আবাসিক স্টাফ কোয়ার্টার ভবন।
১৯৯৫ সালে জামিয়ার শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয় ’শতবার্ষিকী দস্তারবন্দী মহসম্মেল’ বা সমাবর্তন অনুষ্ঠান। এ সম্মেলনে দেশ-বিদেশের ১০ হাজারের বেশি প্রাক্তণ ছাত্র অংশ গ্রহণ করে যাদের দস্তারে ফজিলত প্রদান করা হয়। ২০০২ সালে হযরতের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয় সপ্তবার্ষিকী মহাসম্মেলন। বর্তমানে জামিয়ার বার্ষিক মাহফিলে দস্তাবন্দী সম্মেলন তথা সমাবর্তনও অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর ঐকান্তিক চেষ্টা ও আগ্রহে জামিয়ায় কিরাত, তাজভীদ, তাহফীজ, উচ্চতর হাদিস গবেষণা বিভাগের পাশাপাশি আরবি সাহিত্য বিভাগ, বাংলা সাহিত্য ও গবেষণা বিভাগ, কম্পিউটার, ছাত্রপাঠাগার, জামিয়ার মুখপত্র মাসিক মুইনুল ইসলাম-এর নিয়মিত প্রকাশনা, ইসলামি আইন পরিষদ, সাহিত্য পরিষদ, ফাতাওয়া বিভাগ ইত্যাদি সুন্দররূপে ও গতিশীলতার সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে।
সামাজিক আন্দোলন ও ধর্মীয় তৎপরতা
অন্যদিকে সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে ইসলামি আদর্শ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তিনি ব্যাপক কর্মকা-ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। শায়খুই ইসলাম হয়রত হুসাইন আহমদ মাদানীর এই আধ্যাত্মিক শিষ্য স্বীয় ও পীর উস্তাদের আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে ইসলামি আকীদ-বিশ্বাস, তাহজীব-তামাদ্দুন, সভ্যতা, সংস্কৃতি ও আদর্শ বাস্তবায়নে যে কোন বাস্তব কর্মসূচিতে তিনি সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত ও সাড়া জাগানো অরাজনৈতিক, আধ্যাত্মিক সংগঠন ’হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’ এর আমীর। নাস্তিক-বিরোধী মাত্র দেড় মাসর আন্দোলনে যে সংগঠন গোটা বাংলাদেশের লাখো-কোটি তাওহীদি জনতাকে এক কাতারে নিয়ে এসেছে। দেশব্যাপী নবীপ্রেমিক জনতার মহাজাগরণ সৃষ্টি করেছে আল্লাহর অসীম রহমত ও অপরিমেয় সাহায্যের ফলে। এই পুস্তকের পরিশিষ্টে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আন্দোলন ও কর্মতৎপরতা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হবে বিধায় এখানে সে বিষয়ে আলোচনা থেকে বিরত রইলাম।
তিনি বাংলাদেশের হক্কানী ওলামায়ে কেরামের নেতৃত্বধানী বিশুদ্দ আকীদার সকল ইসলামি সংগঠনের অভিভাবকত্ব করে যাচ্ছেন। তিনিই যেন সকলের সমন্বয়স্থল। বিভিন্ন ইসলামি দলের নেতৃবৃন্দ যেকোনো সমস্যায় হযরতের কাছে ছুটে আসেন।
হযরতের শিষ্য ও দেশ-বিদেশের সম্মাননা
বর্তমানে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, লন্ডন, দুবাই, কাতার, বাহরাইন, কয়েতসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ও উপমাহদেশের বহু জায়গায় তাঁর ছাত্র-শিষ্য, মুরিদ অনুসারী ছড়িয়ে আছে। বিশেষত, আরবদেশগুলোতে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ও মর্যাদা ঈর্ষণীয়। তাঁর ন¤্রতা, তাকওয়া, ইলম, প্রজ্ঞা প্রত্যক্ষ করে স্বয়ং হারাম শরীফের ইমামগণ তাঁকে (আরবের সবচেয়ে সম্মানসূচক শব্দ) ’শায়খ’ শব্দে সম্বোধন করে থাকেন। ১৯ আগস্ট ২০০১ সালে লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পথে পবিত্র ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব গমন করলে হারামাইন শরীফাইনের মহাপরিচালক শায়খ সালেহ বিন আল হুমাইদ এর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের এক পর্যায়ে তিনি হযরতকে কা’বা শরীফের গেলাফের একটি অংশ উপহার দিয়ে সম্মনিত করেন।
বাংলাদেশ জাতীয় সীরাত কমিটি ২০০৫ সালে তাকে ’শ্রেষ্ঠ ইসলামি ব্যক্তিত্ব’ ঘোষণা করে স্বর্ণপদক প্রদান করে।
সূযের আলোকরশ্মি যেরূপ বিশ্ববাসীকে পথ দেখায়, তেমনই একজন আশলসম্পন্ন প্রকৃত আলিম, নায়েবে রাসূল সা. বিশ্বের মানুষকে আলোর পথ ও সত্যের পথ দেখাতে সক্ষম। মুসলিম উম্মাহর এই ত্যাগী সংগ্রামী ও বিপ্লবী সমাজসংস্কারক আজীবন শিরক-বিদআত, কবর পূজা, মাজার পূজা, তথা সকল কুসংস্কার উচ্ছেদের ক্ষেত্রে সদা জাগ্রত। হযরতের আবেগঘন, জ্বালাময়ী ও সারগর্ভ উপস্থাপনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। তাঁর তথ্যবহুল, বিশ্লেষণধর্মী ও যু্িক্তপূর্ণ বয়ান, ভাষণ ইত্যাদির ফলে লাখ লাখ মানুষ ভ্রষ্টাচার ও ভ্রান্তপথ ছেড়ে ঈমান ও আমলের আলোকিত পথে উঠে আসছেন- আলহামদুলিল্লাহ।
আধ্যাত্মিকতা
কর্মময় জীবনের হাজারো ব্যস্ততা স্বত্বেও সময় ও নিয়মানুবর্তিতা হযরতের জীবনধারার এক অবিচ্ছেদ অংশ। দিন-রাতের মূল্যবান সময়কে নির্দিষ্ট রুটিনে ভাগ করে অধ্যাপনা, অধ্যয়ন, মাদ্রাসা পরিচালনা, ইবাদত-বন্দেগী, জিকির-আজকার, সাক্ষাৎপ্রার্থী ও শুভার্থীদের সাক্ষাৎ দেয়া ইত্যাদি সম্পন্ন করেন। গভীর রজনীতে মানুষ যখন গভীর নিদ্রায় বিভোর তখন তিনি দাঁড়িযে যান তাহাজ্জুদ নামাজে। একান্ত-নিভৃতে আদায় করে বিভিন্ন অজিফ। অশ্রুবিগলিত কন্ঠে, কায়মনোবাক্যে দোয়া করেন দেশ, জাতি, সমাজ-রাষ্ট্র ও গোটা মুসলিম উম্মাহ সর্বোপরি মানবতার জন্যে।
লেখক, গবেষক ও গ্রন্থাকার আল্লামা আহমদ শফী
দারস-অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি লেখালেখি ও বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গণে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রেখে চরেছেন। ঈমান, আকীদা, আত্মশুদ্ধি, দাওয়াত, জিহাদ, ইসলামি শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতিসহ বহু বিষয়ে তিনি গ্রন্থ রচনা করে একদিকে তাঁর গবেষণালব্ধ জ্ঞান মানুষের মাঝে সাবলিল ভাষায় উপস্থাপন করেছেন অন্যদিকে মিথ্যা, বিকৃত ও ভ্রান্ত আকিদা-বিশ্বাস সম্পর্কে সাধারণ মুসলমানেদের চোখ খুলে দিয়েছেন।
তার রচিত গ্রন্থাবলির মধ্যে অন্যতম হল-
১. হক বাতিলের চিরন্তর দ্বন্ধ
২. ইসলামী অর্থব্যবস্থা
৩. ইসলাম ও রাজনীতি
৪. ইজহারে হাকিকত বা বাস্তব দৃষ্টিতে মওদুদী মতবাদ
৫. তাকফীরে মুসলিম বা মুসলমানকে কাফির বলার পরিণাম
৬. সত্যের দিকে করুণ আহবান
৭. একটি সন্দেহের অবসান
৮. একটি গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া
৯. তাবলীগ অন্যতম জিহাদ
১০. ইছমতে আম্বিয়া ও মি’ইয়ারে হক
১১. বায়আতের হাকিকত প্রভৃতি।
পরিশিষ্ট: হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর আমীর আল্লামা আহমদ শফী
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ একটি সামাজিক, আধ্যাত্মিক ও আত্মসংশোধনমূলক সংগঠন। মূলত, এটি সবৃজনীন অরাজনৈতিক একটি প্লাটফরম। মুসলমানদের ঈমান-আক্বীদা, সভ্যতা-সংস্কৃতি, ইসলামের বিধান ও প্রতীকসমূহের হেফাজত সম্পর্কে মুসলমানদের সচেতন করে তোলা এবং ধর্মীয় ইস্যুতে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দেলন অব্যাহত রাখা হেফাজত ইসলামের প্রধান লক্ষ্য।
হেফাজতে ইসলাম মুসলমানদের ঈমান-আক্বীদা ও তাহযীব-তামাদ্দুন সংরক্ষণে সর্বাত্মক ও নিরাপস ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। কোনো রাজনৈতিক লক্ষ্যে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি পরিচালিত হয় না। কারো সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক স্বার্থভিত্তিক বন্ধুত্ব বা শত্রুতা নেই। কিন্তু রাজনৈতিক ইস্যুর আড়ালে ইসলামকে টার্গেট করা হচ্ছে বিধায় দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে হেফাজতে ইসলাম সর্বস্তরের মু’মিন –মুসলমান তথা নবীপ্রেমিক, ইসলামপ্রিয় জনতাকে সঙ্গে নিয়ে কিচু কর্মসূটি ঘোষণা করেছে। মহান আল্লাহ তা’য়ালা, রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম, ইসলামের বিধান ও প্রতীকসমূহের ওপর কাফের-মুশরিক, ইয়াহুদি-নাসারা ও তাদের দোসরদের আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করা সময়ের অপরিহার্য দাবি। উম্মতে মুসলিমার সঙ্কটকালে আকাবেরীন ওলামায়ে দেওবন্দ যেভাবে কুরবানী ও ত্যাগের নজরানা পেশ করেছিলেন তা আমাদের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁদের অনুসারী হিসেবে আমরা প্রত্যেকে দীনের মুজাহিদ হিসেবে নিজেকে আল্লাহর রাস্তায় পেশ করতে হবে।
শতকরা নব্বই শাতাংশ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশ। এদেশ হাজার হাজার আলিমা-ওলামা, পীর-বুজর্গ, মুহাদ্দি-মুফাস্সির, মুফতি, অলি-আউলিয়ার জন্মভূমি। যাঁদের পদচারণায় বাংলার মাটি ইসলামের উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এ মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে, ইমামুল হিন্দ শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহদ্দিসে দেহলভী রাহ. এর উত্তরসূরি, হুজ্জাতুল ইসলাম কাসম নানুতুভী রাহ., ফকীহুল হিন্দ রশীদ আহমদ গঙ্গুহী রাহ. ও শায়খুল ইসলাম সাইয়েদ হুসাইন আহমদ মাদানী রাহ. এর লাখো রূহানী সন্তান। এ ঐতিহাসিক বাস্তবতার কারণেই এ মাটির গভীরে প্রোথিত আছে ইসলামের বিস্তৃত শিকড়। আজ সেই বাংলাদেশ থেকে ইসলামকে সমূলে উৎখাতের হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী ও ব্রাক্ষ্মণ্যবাদী গোষ্ঠী এবং তাদের এদেশীয় এজেন্ট মুসলিম নামধারী কিছু নাস্তিক মুরতাদ ও তাসলিমা নাসরিনের ভাবশিষ্য বামপন্থী ব্লগাররা। যারা আল্লাহ, রাসুল, ইসলামের প্রতীকসমূহের ওপর আক্রমণের দিক থেকে ইতোমধ্যেই তাসলিমা নাসরিনসহ তাদের সকল পূর্বসূরী নাস্তিক এমনকি ইয়াহুদি স্যামবাসিলকেও ছাড়িয়ে গেছে।
আল্লাহ-রাসুল সা., উম্মাহাতুল মু’মিনীন, সাহাবায়ে কেরাম ও ইসলামের মৌলিক বিধান সমূহের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াচ্ছে। শুধু তাই নয়, বামপন্থী নাস্তিক বুদ্ধিজীবিদের পরামর্শে বর্তমান সরকার এ দেশ থেকে ইসলাম বিতাড়নের দীর্ঘমেয়াদী নীল নকশা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। কতিপয় প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া তাদের বলিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে প্রতিনিয়ত ইসলাম, মুসলমান ও আলিম-ওলঅমাদের হেয়প্রতিপন্ন করার হীন চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তারা আলিম-ওলামা ও মাদানিসে দীনিয়্যার বিরুদ্ধে হরদম মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন করে জাতিকে বিভক্ত করার অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। আযাদী আন্দোলনের দুর্দান্ত সিপাহসালার শায়খুল ইসলাম আল্লামা হুসাইন আহমদ মাদানীর (রাহ.) সুযোগ্য উত্তরসূরি দলমত-শ্রেণীগোষ্ঠী নির্বিশেষে ঈমান, আকীদা, ইসলামের প্রতীক, বিধান, তাহযীব-তামাদ্দুন সমুন্নত রাখার প্রত্যয়ে ঈমানী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এই আন্দোলনে সর্বত্র অভাবনীয় সাড়া জেগেছে। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, রুপসা থেকে পাথুরিয়া নবীপ্রেমিক জনতার এই মহাজাগরণ আল্লামা আহমদ শফীর ইখলাস, নিষ্ঠা, লিল্লাহিয়্যাত ও ঈমানীশক্তির বরকতের ফসল। হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে আল্লামা শাহ আহমদ শফী যে কর্মসূচি দিচ্ছেন সবখানেই বিস্ময়করভাবে আল্লাহর সাহায্য পরিদৃষ্ট হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ।
সৃষ্টির সূচনাকাল থেকেই আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কচ্যুত মানবজাতিকে সত্য, সুন্দর কল্যাণ ও মুক্তির আলোকিত তুলে আনার জন্য ওয়াজ-নসিহত, শিক্ষা ও তরবিয়্যতের মিশনে নিয়োজিত থেকেছেন নবী-রাসূলের উত্তরসূরি আলিম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, অলি-আউলিয়া। বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন :
’(হে মুহাম্মদ সা.) আপনি (মানবজাতিকে) হিকমাত ও সুন্দর উপদেশ প্রদানের মাধ্যমে আপনার প্রভুর পথে আহবান করুন।’
আল্লাহ প্রদত্ত এ দায়িত্ব পালনকে জীবনের প্রধান লক্ষ্যরুপে নির্ধারণ করেছেন এবং উদ্দেশ্যকে সফল করতে পার্থিব সম্পদ-ঐশ্বর্য, সুখ-স্বাচ্ছন্দ ও যাবতীয় লোভ-লালসা, ভয়ভীতি, তিরস্কার-ভৎর্সনা উপেক্ষা করে হকের দাওয়াতী মশাল প্রজ্জ্বলিত রেখেছেন। কেয়ামত পর্যন্ত ইনশা’আল্লাহ এই প্রদীপ আলো ছড়াবে। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন,
’আমার উম্মতের একটি দল সর্বাবস্থায় সত্যেও ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে, শত্রুরা তাদেও কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’
সুতরাং কোনো শতাব্দী, কোনো যুগ সত্যপন্থী এই পবিত্র দলের তৎপরতাবিহীন থাকবে না। প্রত্যেক যুগের এদেও একটি কাফেলা থাকবে; যারা ইসলামের প্রচার, উপস্থাপন ও আল্লাহর বাণীকে সর্বোচ্চে তুলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। আল্লাহর পথের দাঈ ও রাসূলের আদর্শেও পতাকাবাহী দীনের এই সৈনিকরা পৃথিবীর মহামূল্যবান সম্পদ। জনসমাজে, ইতিহাসের পাতায় ও মানুষের হৃদয়ে তারা চিরদিন রাজত্ব করেন, ইহজগত থেকে শারীরিকভাবে লোকান্তরিত হয়েও জগতে তাঁরা বেঁচে থাকেন চিরকাল।
উপমাহাদেশের এমন ক্ষণজন্ম মহাপুরুষদের অন্যতম হলেন, দেশবরেণ্য আলিমেদীন, অলিয়ে কামেল, শায়খুল ইসলাম হযরত আল্লামা হুসাইন আহমদ মাদানীর (রাহ.) অন্যতম খলিফা, দেশের প্রাচীন ও বৃহৎ দীনি দরসেগাহ জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর মুহতামিম, শায়খুল আল্লামা শাহ আহমদ শফী। যার কৈশৌর, যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব আর বার্ধক্য ইলম, আমল, ইখলাস (আত্মশুদ্ধি), দাওয়াতের পূণ্যময় আলোয় উদ্ভাসিত। গোটা জাতির অবিসংবাদিত এই আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক একাধারে মেধাবী আলিম, সফল শিক্ষক, পরিশুদ্ধ সাধক, দূরদর্শী সমাজসংস্কারক, সংযমী, বিনয়ী, সদালাপী, মিষ্টভাষী, যু্ক্তিবাদী, উদার ও পরম স্নেহবৎসল এক জ্যোর্তিময় ব্যক্তিত্ব।
পঙ্কিলতার আবর্তে ডুবে যাওয়া সমাজে আত্মশুদ্ধির মঞ্চে শুদ্ধতার ছড়ি হাতে এক বিস্ময়কর ব্যক্তিত্বের ধীর অথচ দৃঢ় কদমে অগ্রসরমান এক শান্ত-সমাহিত ব্যক্তিত্বের আলেখ্য পাঠকের হাতে তুলে দিতে চাই। ভক্তপ্রাণের হৃদয়নদে দু’কুল ছাপিয়ে বহমান অঢেল প্রশান্তির শূর্তপ্রতীক শ্বেতশুভ্র পোষাকে অনিন্দ্যসুন্দর এক অসাধারণ মানুষের কাহিনী হয়রত আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব (দা.বা.) এই সংক্ষিপ্ত ’জীবন কথা’।
জন্ম, বেড়ে ওঠা শিক্ষা-দীক্ষা পর্ব
১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ১৩৫১ হিজরী সালে বার আউলিয়ার পূর্ণভুমি বীর চট্টলার রাঙ্গুনিয়া থানাধীন পাখিয়ার টিলা নামক গ্রামে এক অভিজাত, সম্ভ্রান্ত ও ঐতিহ্যবাহী দীনদান পরিবারে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর জন্ম। তাঁর ভাগ্যবান পিতা জনাব বরকত আলী ও রতœগর্ভা মাতা মেহেরুন নেসা বেগম। নবজাতক আহমদ শফীর জন্মের পর মা-বাবা তাদের নয়নমনি, প্রিয় সন্তানকে মুসলিম উম্মাহর পথনির্দেশক হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন বুনতে থাকেন। মহান আল্লাহ, তাঁদের এ মহৎ স্বপ্ন অপূর্ণ রাখেননি। শৈশবে তাঁর পিতা-মাতা শিশু আহমদ শফীকে পবিত্র কুরআন শিক্ষা দেবার মৌলভী আজিজুর রহমানের কাছে প্রেরণ করেন। সমান্তরালে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গেই চতুর্থ শ্রেণী পর্যনত্ সাধারণ শিক্ষার পাঠক্রম সম্পন্ন করেন। এরপর সরফভাটা মাদ্রাসায় প্রাথমিক কিতাবাদি অধ্যয়ন শুরু করেন। ছোট বেলা থেকেই অত্যন্ত ন¤্র, বিনয়ী, চিন্তাশীল, প্রখর মেধাবী, তীক্ষèধীরশক্তির, অধিকারী হওয়া বয়সেই তিনি কুরআনের কারিমের নাজার, প্রাথমিক শিক্ষাস্তর কৃতিত্বের সঙ্গে সমাপ্ত করেন। অতঃপর কিশোর আহমদ শফী মাধ্যমিক স্তরের পড়ালেখার উদ্দেশ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামের এতিহ্যবাহী প্রাচীর ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল-জামিয়া আল আরবিয়া জিরি-তে ভর্তি হন। সেখানে ৫/৬ মাস অধ্যয়ন করার পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঢংকা বেজে উঠার পরিপ্রেক্ষিতে ১৩৬১ হিজরীতে তাাঁর শ্রদ্ধাস্পদ হিতাকাক্সক্ষী হাফেজ ইমতিয়াজের প্রচেষ্টায় এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলূম হাটহাজারীতে ভর্তি হন। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১০ বছর। দশ বছরের বালক আহমদ শফীকে এ বয়সেই শোক সাগরে ভাসিয়ে মাতা-পিতা দু’জন পরপর ইন্তেকালা করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)।
দারুল উলূম হাটহাজারীতে তিনি টানা দশ বছর আত্মত্যাগ, কঠোর ধৈর্য, সদাচার, লেখাপড়ায় গভীর অভিনিবেশ ইত্যাদি গুণাবলির কারণে উস্তাদমহলের বিশেষ স্নেহভাজন ছাত্রে পরিণত হন। এখানে এক দশক অতিক্রান্ত হল। সম-সাময়িক বিজ্ঞ আলিমদের স্নেহধন্য সান্নিধ্যে থেকে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ের দক্ষ উস্তাদদের প্রত্যক্ষ তত্ত্ববধানে আরবি সাহিত্য, ব্যাকরণ, নাহু-সরফ, ইলমে ফিকহ, মানতিক (যুক্তিবিদ্যা), দর্শন, বালাগাত (আরবী ভাষার অলঙ্কারশাস্ত্র) প্রভৃতি বিষয়ে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন।
দারুল উলূম মুইনুল ইসলাম হাটহাজারীতে তিনি দেশের শীর্ষ আলিম ও বুজর্গ ব্যক্তিত্বগণের কাছে সরাসরি শিক্ষাগ্রহণের সৌভাজ্য অর্জন করেরন। তাঁর উস্তাদগণের মধ্যে খ্যাতিমান আলিমেদীন, সমাজসংস্কারক, উপমহাদেশের প্রখ্যাত আইনবিশারদ আল্লামা মুফতিয়ে আযম হযরত মাওলানা ফয়েজুল্লাহ (রাহ.), শায়খুল হাদিস আল্লামা সুফী আবদুল কাইয়ুম (রাহ.), শায়খুল আদব আল্লামা মুহাম্মদ আলী নিজামপুরী (রাহ.) ও আল্লামা শায়খ আবুল হাসান (রাহ.) এর নাম প্রণিধানযোগ্য।
উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে দারুল উলূম দেওবন্দ যাত্রা
নবীপ্রেমিক এই বুজর্গের বল্যকাল, প্রাথমিক ও উচ্চশিক্ষার সময়-প্রবাহ ছিল, বৈচিত্রময় ও চাঞ্চল্যকর ঘটনায় পূর্ণ। ১৩৭১ হিজরী সালে তিনি উচ্চ শিক্ষার অদম্য আগ্রহ ও জ্ঞানার্জনের প্রবল তৃষ্ণা নিয়ে ছুটে যান উপমহাদেশের বৃহত্তম ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্র, ঐতিহ্যবাহী হাদিস শিক্ষার পাদপীঠ, জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্যতম সূতিকার দারুল উলূম দেওবন্দে। দারুল উলূম দেওবন্দে তিনি হাদিস, তাফসীর প্রভৃতি উচ্চতর বিশেষায়িত কোর্স সম্পন্ন করেন। দারুল উলূম দেওবন্দে অধ্যয়নকালে তিনি যাঁদের সংশ্রব লাভে করেন তাদের সর্বাগ্রে যার নাম উল্লেখ করতে হয় তিনি হলেন, শায়খুল আরব ওয়াল আজম, আওলাদে রাসুল সা., যুগশ্রেষ্ঠ ও বিশ্ববরেণ্য মুহাদ্দিস, জ্ঞান ও তাকওয়ার অনন্য প্রতীক, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অকুতোভয় সিপাহসালার, মুজাহিদে মিল্লাত, শায়খুল ইসলাম হযরত আল্লামা হুসাইন আহমদ মাদানীর (রাহ.)। অধ্যয়নরত অবস্থায়ই তিনি হযরত মাদাীর হাতে বায়আত গ্রহণ করে খেলাফতপ্রাপ্তির সৌভাগ্য অর্জন করেন।
দারুল উলুম অপরাপর উস্তাদগণ হলেন, হযরত মাওলানা ইব্্রাহিম বলিয়াভী (রাহ.), হযরত মাওলানা ফখরুল হাসান (রাহ.), তিরমিযী ও আবু দাউদ শরীফের উস্তাদ শয়খুল আদব মাওলানা ই’জাজ আলী রাহ.), নাসাঈ শরীফের উস্তাদ হযরত মাওলানা ফখরুল হাসান (রাহ.), মুসলিম শরীফের উস্তাদ হযরত মাওলানা ইবরাহীম বলিয়াভী (রাহ.), তাহাভী শরীফের উস্তাদ হযরত মাওলানা জহিরুল হাসান (রাহ.), মুয়াত্তা মালেকের উস্তাদ হযরত মাওলানা জলিল আহমদ (রাহ.)।
ইলম, আমল আধ্যাত্মিকতায় ধন্য এই মনীষী একাধারে ৪ বছর বিরামহীন অধ্যয়ন ও বিশ্ববিখ্যাত আসাতিযায়ে কেরামের খেদমত ও তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণের মাধ্যমে হাদিস, তাফসীর, ফিক্হশাস্ত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে পান্ডিত্য অর্জন যুগের অন্যতম শীর্ষ মুহাদ্দিস আল্লামা মাদানীর ইলমী ও আমলী প্রতিনিধি হয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও দারুল উলুম হাটহাজারীতে শিক্ষকতা
দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর হযরত তাঁর পরম হিতাকাক্সক্ষী উস্তাদ দারূল উলূম হাটহাজারীর তৎকালীন মুহতামিম আল্লামা শাহ আবদুল ওয়াহহাব (রাহ,) এর সাথে সাক্ষাত করেন। আল্লামা আবদুল ওয়াহহাব তাঁর চরিত্র মাধুরী, গুণাবলি, জ্ঞান, প্রজ্ঞা, পান্ডিত্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি উৎকৃষ্ট বোধশক্তি, সততা, উদারতা, আত্মত্যাগের মানসিকতা, ইখলাস, কর্তব্যনিষ্ঠা, দায়িত্বসচেতনতা সর্বোপরি ইলমের গভীরতা অবলোকন করে খুবই প্রীত ও বিমোহিত হন। ফলে তিনি প্রিয় শিষ্যকে জামিয়ার শিক্ষক পদে নিয়োগ দেন। আল্লাহপ্রেমের লক্ষ্যপানে অবিশ্রান্ত ছুটে চলা অভিযাত্রী, চিরপ্রত্যয়ী, মননশীল এ তরুণ আলিম এ জামিয়া থেকে তাঁর অধ্যাপনার কথা পুরো জামিয়া ছড়িয়ে পড়ে অল্পদিনের মধ্যেই। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ইলমের তৃষ্ণার্ত সন্ধানী মৌমাছিরা ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসে জামিয়ায়। পাশাপশি তিনি নবী আদর্শের প্রতিচ্ছবিরুপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারার ফলেই নানা শ্রেণী-পেশা মানুষ আত্মশুদ্ধি ও আত্মিক উন্নয়নের তৃষ্ণা নিবারণে তাঁর কাছে ছুটে আসে সবসময়।
জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুইনুল ইসলাম হাটহাজারীর পরিচালক
১৪০৭ হিজরী সালে তদানীন্তন জামিয়ার মুহতামিম আল্লামা হামেদ ৯রাহ.) পরলোক গমন করলে জামিয়ার সর্বোচ্চ মজলিসে শুরার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জামিয়া পরিচালনার গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয় বর্তমান মুহতামিম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর উপর। হযরতের দক্ষতাপূর্ণ পরিচালনায় এ পর্যন্ত জামিয়া আহলিয়া হাটহাজারীর ইলমী, আমলী, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রভূতি উন্নতি সাধিত হয়। বর্তমানে তিনি পরিচালকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জামিয়ার শায়খুল হাদিসেরও দায়িত্ব আঞ্জাম দিচ্ছেন। দারুল উলুম মুইনুল ইসলাম হাটহাজারী তাঁর আমলেই ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে।
ঘযরতের সফল উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় দারুল উলূমের ব্যাপক সম্প্রসারণ ও সংস্কারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ছাত্রদের আবাসন সঙ্কট নিরসনকল্পে বহু আবাসিক ছাত্রাবাস ভবন, দারুল হাদিস সম্প্রসারণ, জামিয়ার উত্তর পাশে তিন তলা বিশিষ্ট নতুর জামে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। রেলওয়ে থেকে পরিত্যক্ত ভূমি স্থায়ী লিজ নিয়ে সেখানে নির্মিত হয়েছে ৬ তলা বিশিষ্ট দু’টি আবাসিক স্টাফ কোয়ার্টার ভবন।
১৯৯৫ সালে জামিয়ার শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয় ’শতবার্ষিকী দস্তারবন্দী মহসম্মেল’ বা সমাবর্তন অনুষ্ঠান। এ সম্মেলনে দেশ-বিদেশের ১০ হাজারের বেশি প্রাক্তণ ছাত্র অংশ গ্রহণ করে যাদের দস্তারে ফজিলত প্রদান করা হয়। ২০০২ সালে হযরতের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয় সপ্তবার্ষিকী মহাসম্মেলন। বর্তমানে জামিয়ার বার্ষিক মাহফিলে দস্তাবন্দী সম্মেলন তথা সমাবর্তনও অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর ঐকান্তিক চেষ্টা ও আগ্রহে জামিয়ায় কিরাত, তাজভীদ, তাহফীজ, উচ্চতর হাদিস গবেষণা বিভাগের পাশাপাশি আরবি সাহিত্য বিভাগ, বাংলা সাহিত্য ও গবেষণা বিভাগ, কম্পিউটার, ছাত্রপাঠাগার, জামিয়ার মুখপত্র মাসিক মুইনুল ইসলাম-এর নিয়মিত প্রকাশনা, ইসলামি আইন পরিষদ, সাহিত্য পরিষদ, ফাতাওয়া বিভাগ ইত্যাদি সুন্দররূপে ও গতিশীলতার সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে।
সামাজিক আন্দোলন ও ধর্মীয় তৎপরতা
অন্যদিকে সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে ইসলামি আদর্শ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তিনি ব্যাপক কর্মকা-ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। শায়খুই ইসলাম হয়রত হুসাইন আহমদ মাদানীর এই আধ্যাত্মিক শিষ্য স্বীয় ও পীর উস্তাদের আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে ইসলামি আকীদ-বিশ্বাস, তাহজীব-তামাদ্দুন, সভ্যতা, সংস্কৃতি ও আদর্শ বাস্তবায়নে যে কোন বাস্তব কর্মসূচিতে তিনি সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত ও সাড়া জাগানো অরাজনৈতিক, আধ্যাত্মিক সংগঠন ’হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’ এর আমীর। নাস্তিক-বিরোধী মাত্র দেড় মাসর আন্দোলনে যে সংগঠন গোটা বাংলাদেশের লাখো-কোটি তাওহীদি জনতাকে এক কাতারে নিয়ে এসেছে। দেশব্যাপী নবীপ্রেমিক জনতার মহাজাগরণ সৃষ্টি করেছে আল্লাহর অসীম রহমত ও অপরিমেয় সাহায্যের ফলে। এই পুস্তকের পরিশিষ্টে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আন্দোলন ও কর্মতৎপরতা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হবে বিধায় এখানে সে বিষয়ে আলোচনা থেকে বিরত রইলাম।
তিনি বাংলাদেশের হক্কানী ওলামায়ে কেরামের নেতৃত্বধানী বিশুদ্দ আকীদার সকল ইসলামি সংগঠনের অভিভাবকত্ব করে যাচ্ছেন। তিনিই যেন সকলের সমন্বয়স্থল। বিভিন্ন ইসলামি দলের নেতৃবৃন্দ যেকোনো সমস্যায় হযরতের কাছে ছুটে আসেন।
হযরতের শিষ্য ও দেশ-বিদেশের সম্মাননা
বর্তমানে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, লন্ডন, দুবাই, কাতার, বাহরাইন, কয়েতসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ও উপমাহদেশের বহু জায়গায় তাঁর ছাত্র-শিষ্য, মুরিদ অনুসারী ছড়িয়ে আছে। বিশেষত, আরবদেশগুলোতে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ও মর্যাদা ঈর্ষণীয়। তাঁর ন¤্রতা, তাকওয়া, ইলম, প্রজ্ঞা প্রত্যক্ষ করে স্বয়ং হারাম শরীফের ইমামগণ তাঁকে (আরবের সবচেয়ে সম্মানসূচক শব্দ) ’শায়খ’ শব্দে সম্বোধন করে থাকেন। ১৯ আগস্ট ২০০১ সালে লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পথে পবিত্র ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব গমন করলে হারামাইন শরীফাইনের মহাপরিচালক শায়খ সালেহ বিন আল হুমাইদ এর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের এক পর্যায়ে তিনি হযরতকে কা’বা শরীফের গেলাফের একটি অংশ উপহার দিয়ে সম্মনিত করেন।
বাংলাদেশ জাতীয় সীরাত কমিটি ২০০৫ সালে তাকে ’শ্রেষ্ঠ ইসলামি ব্যক্তিত্ব’ ঘোষণা করে স্বর্ণপদক প্রদান করে।
সূযের আলোকরশ্মি যেরূপ বিশ্ববাসীকে পথ দেখায়, তেমনই একজন আশলসম্পন্ন প্রকৃত আলিম, নায়েবে রাসূল সা. বিশ্বের মানুষকে আলোর পথ ও সত্যের পথ দেখাতে সক্ষম। মুসলিম উম্মাহর এই ত্যাগী সংগ্রামী ও বিপ্লবী সমাজসংস্কারক আজীবন শিরক-বিদআত, কবর পূজা, মাজার পূজা, তথা সকল কুসংস্কার উচ্ছেদের ক্ষেত্রে সদা জাগ্রত। হযরতের আবেগঘন, জ্বালাময়ী ও সারগর্ভ উপস্থাপনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। তাঁর তথ্যবহুল, বিশ্লেষণধর্মী ও যু্িক্তপূর্ণ বয়ান, ভাষণ ইত্যাদির ফলে লাখ লাখ মানুষ ভ্রষ্টাচার ও ভ্রান্তপথ ছেড়ে ঈমান ও আমলের আলোকিত পথে উঠে আসছেন- আলহামদুলিল্লাহ।
আধ্যাত্মিকতা
কর্মময় জীবনের হাজারো ব্যস্ততা স্বত্বেও সময় ও নিয়মানুবর্তিতা হযরতের জীবনধারার এক অবিচ্ছেদ অংশ। দিন-রাতের মূল্যবান সময়কে নির্দিষ্ট রুটিনে ভাগ করে অধ্যাপনা, অধ্যয়ন, মাদ্রাসা পরিচালনা, ইবাদত-বন্দেগী, জিকির-আজকার, সাক্ষাৎপ্রার্থী ও শুভার্থীদের সাক্ষাৎ দেয়া ইত্যাদি সম্পন্ন করেন। গভীর রজনীতে মানুষ যখন গভীর নিদ্রায় বিভোর তখন তিনি দাঁড়িযে যান তাহাজ্জুদ নামাজে। একান্ত-নিভৃতে আদায় করে বিভিন্ন অজিফ। অশ্রুবিগলিত কন্ঠে, কায়মনোবাক্যে দোয়া করেন দেশ, জাতি, সমাজ-রাষ্ট্র ও গোটা মুসলিম উম্মাহ সর্বোপরি মানবতার জন্যে।
লেখক, গবেষক ও গ্রন্থাকার আল্লামা আহমদ শফী
দারস-অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি লেখালেখি ও বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গণে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রেখে চরেছেন। ঈমান, আকীদা, আত্মশুদ্ধি, দাওয়াত, জিহাদ, ইসলামি শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতিসহ বহু বিষয়ে তিনি গ্রন্থ রচনা করে একদিকে তাঁর গবেষণালব্ধ জ্ঞান মানুষের মাঝে সাবলিল ভাষায় উপস্থাপন করেছেন অন্যদিকে মিথ্যা, বিকৃত ও ভ্রান্ত আকিদা-বিশ্বাস সম্পর্কে সাধারণ মুসলমানেদের চোখ খুলে দিয়েছেন।
তার রচিত গ্রন্থাবলির মধ্যে অন্যতম হল-
১. হক বাতিলের চিরন্তর দ্বন্ধ
২. ইসলামী অর্থব্যবস্থা
৩. ইসলাম ও রাজনীতি
৪. ইজহারে হাকিকত বা বাস্তব দৃষ্টিতে মওদুদী মতবাদ
৫. তাকফীরে মুসলিম বা মুসলমানকে কাফির বলার পরিণাম
৬. সত্যের দিকে করুণ আহবান
৭. একটি সন্দেহের অবসান
৮. একটি গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া
৯. তাবলীগ অন্যতম জিহাদ
১০. ইছমতে আম্বিয়া ও মি’ইয়ারে হক
১১. বায়আতের হাকিকত প্রভৃতি।
পরিশিষ্ট: হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর আমীর আল্লামা আহমদ শফী
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ একটি সামাজিক, আধ্যাত্মিক ও আত্মসংশোধনমূলক সংগঠন। মূলত, এটি সবৃজনীন অরাজনৈতিক একটি প্লাটফরম। মুসলমানদের ঈমান-আক্বীদা, সভ্যতা-সংস্কৃতি, ইসলামের বিধান ও প্রতীকসমূহের হেফাজত সম্পর্কে মুসলমানদের সচেতন করে তোলা এবং ধর্মীয় ইস্যুতে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দেলন অব্যাহত রাখা হেফাজত ইসলামের প্রধান লক্ষ্য।
হেফাজতে ইসলাম মুসলমানদের ঈমান-আক্বীদা ও তাহযীব-তামাদ্দুন সংরক্ষণে সর্বাত্মক ও নিরাপস ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। কোনো রাজনৈতিক লক্ষ্যে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি পরিচালিত হয় না। কারো সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক স্বার্থভিত্তিক বন্ধুত্ব বা শত্রুতা নেই। কিন্তু রাজনৈতিক ইস্যুর আড়ালে ইসলামকে টার্গেট করা হচ্ছে বিধায় দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে হেফাজতে ইসলাম সর্বস্তরের মু’মিন –মুসলমান তথা নবীপ্রেমিক, ইসলামপ্রিয় জনতাকে সঙ্গে নিয়ে কিচু কর্মসূটি ঘোষণা করেছে। মহান আল্লাহ তা’য়ালা, রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম, ইসলামের বিধান ও প্রতীকসমূহের ওপর কাফের-মুশরিক, ইয়াহুদি-নাসারা ও তাদের দোসরদের আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করা সময়ের অপরিহার্য দাবি। উম্মতে মুসলিমার সঙ্কটকালে আকাবেরীন ওলামায়ে দেওবন্দ যেভাবে কুরবানী ও ত্যাগের নজরানা পেশ করেছিলেন তা আমাদের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁদের অনুসারী হিসেবে আমরা প্রত্যেকে দীনের মুজাহিদ হিসেবে নিজেকে আল্লাহর রাস্তায় পেশ করতে হবে।
শতকরা নব্বই শাতাংশ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশ। এদেশ হাজার হাজার আলিমা-ওলামা, পীর-বুজর্গ, মুহাদ্দি-মুফাস্সির, মুফতি, অলি-আউলিয়ার জন্মভূমি। যাঁদের পদচারণায় বাংলার মাটি ইসলামের উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এ মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে, ইমামুল হিন্দ শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহদ্দিসে দেহলভী রাহ. এর উত্তরসূরি, হুজ্জাতুল ইসলাম কাসম নানুতুভী রাহ., ফকীহুল হিন্দ রশীদ আহমদ গঙ্গুহী রাহ. ও শায়খুল ইসলাম সাইয়েদ হুসাইন আহমদ মাদানী রাহ. এর লাখো রূহানী সন্তান। এ ঐতিহাসিক বাস্তবতার কারণেই এ মাটির গভীরে প্রোথিত আছে ইসলামের বিস্তৃত শিকড়। আজ সেই বাংলাদেশ থেকে ইসলামকে সমূলে উৎখাতের হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী ও ব্রাক্ষ্মণ্যবাদী গোষ্ঠী এবং তাদের এদেশীয় এজেন্ট মুসলিম নামধারী কিছু নাস্তিক মুরতাদ ও তাসলিমা নাসরিনের ভাবশিষ্য বামপন্থী ব্লগাররা। যারা আল্লাহ, রাসুল, ইসলামের প্রতীকসমূহের ওপর আক্রমণের দিক থেকে ইতোমধ্যেই তাসলিমা নাসরিনসহ তাদের সকল পূর্বসূরী নাস্তিক এমনকি ইয়াহুদি স্যামবাসিলকেও ছাড়িয়ে গেছে।
আল্লাহ-রাসুল সা., উম্মাহাতুল মু’মিনীন, সাহাবায়ে কেরাম ও ইসলামের মৌলিক বিধান সমূহের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াচ্ছে। শুধু তাই নয়, বামপন্থী নাস্তিক বুদ্ধিজীবিদের পরামর্শে বর্তমান সরকার এ দেশ থেকে ইসলাম বিতাড়নের দীর্ঘমেয়াদী নীল নকশা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। কতিপয় প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া তাদের বলিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে প্রতিনিয়ত ইসলাম, মুসলমান ও আলিম-ওলঅমাদের হেয়প্রতিপন্ন করার হীন চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তারা আলিম-ওলামা ও মাদানিসে দীনিয়্যার বিরুদ্ধে হরদম মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন করে জাতিকে বিভক্ত করার অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। আযাদী আন্দোলনের দুর্দান্ত সিপাহসালার শায়খুল ইসলাম আল্লামা হুসাইন আহমদ মাদানীর (রাহ.) সুযোগ্য উত্তরসূরি দলমত-শ্রেণীগোষ্ঠী নির্বিশেষে ঈমান, আকীদা, ইসলামের প্রতীক, বিধান, তাহযীব-তামাদ্দুন সমুন্নত রাখার প্রত্যয়ে ঈমানী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এই আন্দোলনে সর্বত্র অভাবনীয় সাড়া জেগেছে। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, রুপসা থেকে পাথুরিয়া নবীপ্রেমিক জনতার এই মহাজাগরণ আল্লামা আহমদ শফীর ইখলাস, নিষ্ঠা, লিল্লাহিয়্যাত ও ঈমানীশক্তির বরকতের ফসল। হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে আল্লামা শাহ আহমদ শফী যে কর্মসূচি দিচ্ছেন সবখানেই বিস্ময়করভাবে আল্লাহর সাহায্য পরিদৃষ্ট হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ।
Subscribe to:
Posts (Atom)